MAKE IN INDIA

মেক ইন ইন্ডিয়া (Make In India) প্রকল্পটি ভারতের উৎপাদন খাতকে আন্তর্জাতিক মানের একটি উৎপাদন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ২০১৪ সালে চালু হয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করা, দক্ষতা বৃদ্ধি, উদ্ভাবনে উৎসাহ প্রদান এবং ভারতের অর্থনৈতিক স্থায়ীত্বে সহযোগিতা করা। এই উদ্যোগটি ভারতের পূর্বের স্বয়ংসম্পূর্ণ নীতি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং আধুনিক প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে বৈশ্বিক উৎপাদন মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে উৎসাহিত করে।

Make In India, মেক ইন ইন্ডিয়া নীতির সংজ্ঞা:

Make In India “মেক ইন ইন্ডিয়া” ভারত সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ যা মূলত দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন শিল্পকে শক্তিশালী করে তোলার উদ্দেশ্যে ২০১৪ সালে চালু করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ভারতের উৎপাদন ক্ষেত্রকে বৈশ্বিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা এবং এদেশকে একটি আন্তর্জাতিক উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা, উদ্ভাবনকে প্রচার করা, দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করা এবং সেরা মানের উৎপাদন পরিকাঠামো নির্মাণ করা এই কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য।

Make In India নীতি কী?

Make In India একটি সরকারী উদ্যোগ যা ২০১৪ সালে ভারতের উৎপাদন খাতকে নতুনভাবে গড়ে তোলার জন্য চালু হয়। এর মূল লক্ষ্য হলো:

Make In India নীতির মূল লক্ষ্যগুলো নিম্নরূপ:

  • উৎপাদন খাতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হার ১২-১৪% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা।
  • ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ কোটি অতিরিক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
  • দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে (GDP) উৎপাদন খাতের অবদান ২৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা।

মেক ইন ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্যসমূহ:

  1. উৎপাদন খাতের বৃদ্ধির হার ১২-১৪% পর্যন্ত বাড়ানো।
  2. ২০২৫ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ১০০ মিলিয়ন উৎপাদন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
  3. ভারতের জিডিপিতে উৎপাদন খাতের অবদান ২৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা।

Make In India নীতির কৌশলসমূহ:

  • ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াগুলিকে সরলীকরণ করা: প্রশাসনিক ঝঞ্ঝাটগুলি কমানো এবং নিয়মাবলীকে সহজ করা যাতে কোম্পানিগুলি ভারতে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে সহজে।
  • পরিকাঠামোর উন্নয়ন: বন্দর, রাস্তা, রেলপথ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নতি করা যাতে শিল্পের জন্য নির্ভরযোগ্য এবং কার্যকর পরিকাঠামো প্রদান করা যায়।
  • কর্মীদের দক্ষতাবৃদ্ধি: দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করা, যাতে উৎপাদন ক্ষেত্রের জন্য প্রশিক্ষিত শ্রমশক্তি তৈরি করা যায়।
  • বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা: কর ছাড়, ভর্তুকি এবং অন্যান্য প্রণোদনা প্রদান করে দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা।
  • প্রধান ক্ষেত্রগুলিতে মনোনিবেশ করা: বিশেষ কিছু ক্ষেত্র যেমন অটোমোবাইল, মহাকাশ, প্রতিরক্ষা, ইলেকট্রনিক্স এবং ফার্মাসিউটিক্যালসের উপর জোর দেওয়া।

উদ্যোগের উপ-প্রকল্পসমূহ:

Make In India “মেক ইন ইন্ডিয়া” উদ্যোগের আরও দুটি উল্লেখযোগ্য উপ-উদ্যোগ রয়েছে: “মেড ইন ইন্ডিয়া” (Made in India) এবং “মেক ফর ইন্ডিয়া” (Make for India)। “মেড ইন ইন্ডিয়া” বলতে বোঝায় সেইসব পণ্য, যেগুলি ভারতে তৈরি বা সংকলিত হয়েছে, যদিও তার অংশগুলি বিদেশে উৎপাদিত হতে পারে। এটি মূলত ভারতীয় উৎপাদন ব্র্যান্ডকে বিশ্ব বাজারে প্রচার করার জন্য একটি কৌশল। অন্যদিকে “মেক ফর ইন্ডিয়া” মূলত দেশীয় বাজারের জন্য উৎপাদনের দিকে জোর দেয়।

Make In India উদ্যোগের প্রেক্ষাপট:

“Make In India” নীতির প্রেক্ষাপটে পূর্বের বিভিন্ন উদ্যোগ যেমন জাতীয় উৎপাদন নীতি (NMP 2011), অর্থনৈতিক উদারীকরণ ইত্যাদির ধারাবাহিকতা ছিল। ভারতের উৎপাদন ক্ষেত্রের প্রবৃদ্ধি অনেকদিন ধরেই বাধাগ্রস্ত ছিল, যেমন যথাযথ পরিকাঠামোর অভাব, জটিল ও দুর্নীতিগ্রস্ত নিয়ন্ত্রক পরিবেশ, এবং দক্ষ শ্রমশক্তির অভাব। তাই উৎপাদন ক্ষেত্রে জিডিপি-তে অবদান বৃদ্ধি এবং নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টির জন্য মেক ইন ইন্ডিয়া চালু করা হয়েছিল।

Make In India সাফল্য এবং ব্যর্থতা:

সাফল্যসমূহ:

  1. ইজ অফ ডুইং বিজনেস র‌্যাংকিংয়ে উন্নতি: বিশ্বব্যাংকের ইজ অফ ডুইং বিজনেস র‌্যাংকিংয়ে ভারত ২০১৪ সালের ১৪২তম স্থান থেকে ২০২০ সালে ৬৩তম স্থানে উন্নীত হয়েছে।
  2. বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ: প্রতিরক্ষা, রেলপথ এবং বেসামরিক বিমান চলাচল খাতে বিদেশী এবং বেসরকারী বিনিয়োগের জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে।
  3. মোবাইল ফোন উৎপাদনে সাফল্য: ভারত মোবাইল ফোন উৎপাদনে বৈশ্বিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে, যেখানে ২০১৭-১৮ সালে ২০০ টিরও বেশি ইউনিট ২২৫ মিলিয়ন হ্যান্ডসেট উৎপাদন করেছে।

ব্যর্থতাসমূহ:

  1. কর্মসংস্থান এবং অর্থনীতিতে অবদান বৃদ্ধি করতে ব্যর্থ: মেক ইন ইন্ডিয়া কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং জিডিপিতে উৎপাদন খাতের অবদান ২৫% পর্যন্ত বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে।
  2. নীতিমালা জটিলতা: নীতিগত জটিলতা এবং প্রশাসনিক দুর্বলতা উৎপাদন খাতের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
  3. প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার অভাব: ভারতে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা তৈরি করা সম্ভব হয়নি, যা বৈশ্বিক মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্য রেখে উৎপাদনকে সীমাবদ্ধ করেছে।

ব্যর্থতার কারণসমূহ: মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং অবকাঠামোর অভাব: দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমশক্তি এবং উন্নত অবকাঠামো গড়ে তুলতে প্রচেষ্টা কম ছিল।
  • প্রতিযোগিতার অভাব: আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক উৎপাদন সৃজন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
  • প্রত্যাশিত বিনিয়োগের অভাব: অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত বিনিয়োগ আসেনি, যা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নকে ব্যাহত করেছে।

ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ (MSMEs) এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি: ভারতে MSMEs খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও, কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:

  • অসংগঠিত খাতের সমস্যা: MSMEs-এর ৯৯% এর বেশি প্রতিষ্ঠান অসংগঠিত খাতে কাজ করে, যা অধিক কর্মসংস্থান তৈরিতে সফল নয়।
  • স্বল্প আয় এবং উৎপাদনশীলতা: অসংগঠিত খাতের কর্মসংস্থান প্রায়ই স্বল্প আয়ের এবং কম উৎপাদনশীলতার সঙ্গে সম্পর্কিত।

কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য করণীয়:

মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের অধীনে কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন:

  • শিল্পনীতি তৈরি করা: শ্রমবহুল উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য একটি সুসংহত জাতীয় শিল্পনীতি প্রয়োজন।
  • দক্ষতা উন্নয়ন: শ্রমশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিনিয়োগ করা।

জাতীয় শিল্পনীতির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি

ভারতের বিশাল জনসংখ্যা এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির কথা মাথায় রেখে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দক্ষতাবৃদ্ধি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুদূরপ্রসারী জাতীয় শিল্পনীতি এ ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। জাতীয় শিল্পনীতি বলতে বোঝায় এমন নীতিগুলি, যেগুলির মাধ্যমে দেশের শিল্প খাতের বিকাশ ও প্রবৃদ্ধি ঘটানো যায় এবং এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা যায়।

জাতীয় শিল্পনীতির মাধ্যমে কীভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব, তার কিছু কৌশল নিম্নরূপ:

১. উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার

জাতীয় শিল্পনীতি নতুন নতুন প্রযুক্তির উন্নয়ন ও উদ্ভাবনের জন্য সহায়ক হতে পারে। এতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি করে। উদ্ভাবনী নীতিগুলি যেমন প্রযুক্তি হাব, ইনকিউবেশন সেন্টার এবং স্টার্টআপ কোম্পানিগুলির জন্য উৎসাহ প্রদান করতে পারে। এর মাধ্যমে প্রযুক্তি ভিত্তিক কর্মসংস্থান যেমন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং, অটোমেশন ইত্যাদি খাতে প্রচুর নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

২. এমএসএমই (MSME) খাতের শক্তিশালীকরণ

ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি শিল্প (MSME) খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় শিল্পনীতির মাধ্যমে এই খাতকে উৎসাহিত করা যায় যেমন সহজ ঋণ প্রদান, কর ছাড় এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা। MSME খাতের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের জন্য সহজলভ্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

৩. দক্ষতা উন্নয়ন এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি

জাতীয় শিল্পনীতি কাজের গুণমান ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উপর জোর দেয়। বিভিন্ন দক্ষতাবিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের যুবসমাজকে কাজের জন্য প্রস্তুত করা যায়। উৎপাদন খাত, আইটি, রিটেইল, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি খাতে কর্মী প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে যোগ্যতাসম্পন্ন শ্রমশক্তি তৈরি হবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে।

৪. অবকাঠামো উন্নয়ন

উন্নত অবকাঠামো কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি। রেলপথ, সড়কপথ, বন্দর, বিদ্যুৎ সরবরাহ, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের মতো অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে শিল্পক্ষেত্রের প্রসার ঘটানো যায়। নতুন অবকাঠামো নির্মাণের ফলে যেমন অনেক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়, তেমনি দীর্ঘমেয়াদে শিল্পগুলি প্রসার লাভ করে, যা ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান বাড়াতে সহায়ক হয়।

৫. শিল্প পার্ক ও ইকোনমিক জোন

বিভিন্ন শিল্প পার্ক এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ) তৈরি করে দেশের শিল্পনীতি বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানকে একসাথে নিয়ে আসে। এতে উৎপাদন খাতের জন্য বৃহৎ পরিকাঠামো তৈরি হয়, যা দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক। এর মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হয়।

মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের সুযোগসমূহ ও চ্যালেঞ্জসমূহ

মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পটি দেশের শিল্প খাতকে বৈশ্বিক মঞ্চে পরিচিত করার একটি বড় উদ্যোগ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এই প্রকল্পের সাফল্য যেমন রয়েছে, তেমন কিছু চ্যালেঞ্জও সামনে এসেছে।

সুযোগসমূহ:

১. বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ বৃদ্ধি: মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতে বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) বাড়ানো হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিক্স, ফার্মাসিউটিক্যালস, এবং প্রতিরক্ষা খাতে বিদেশি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক।

২. উৎপাদন খাতে প্রযুক্তিগত উন্নতি: এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ও উৎপাদন প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তি কর্মদক্ষতার উন্নতি ঘটিয়েছে, যার ফলে উৎপাদন খাতে গুণগতমান বৃদ্ধি পেয়েছে।

৩. রফতানি বৃদ্ধি: মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের ফলে ভারতীয় পণ্য ও পরিষেবা বৈশ্বিক বাজারে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান অর্জন করেছে। বিশেষ করে অটোমোবাইল, বস্ত্র, ও ইলেকট্রনিক্স খাতে রফতানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

৪. বহু খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি: অটোমোবাইল, টেক্সটাইল, ফার্মা ইত্যাদি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়িয়েছে। বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে শিল্প বিকাশ কর্মসংস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

চ্যালেঞ্জসমূহ:

১. অবকাঠামোগত দুর্বলতা: মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো অবকাঠামোগত দুর্বলতা। উন্নত অবকাঠামো ছাড়া উৎপাদন খাতের প্রসার সম্ভব নয়। রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ সরবরাহ, এবং রেলপথের মতো অবকাঠামোতে এখনো অনেক উন্নয়নের প্রয়োজন।

২. নিয়ম-কানুনের জটিলতা: ভারতের ব্যবসা করার জন্য অনেক নিয়ম-কানুন ও প্রক্রিয়া অনেক জটিল। আমলাতান্ত্রিক বাধা ও অনুমোদনের দীর্ঘসূত্রিতা বিদেশি বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। সহজ ব্যবসায়িক নীতি ছাড়া উৎপাদন খাতের উন্নতি সীমিত হবে।

৩. দক্ষ শ্রমশক্তির অভাব: মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দক্ষ শ্রমশক্তির অভাব। উচ্চমানের উৎপাদনের জন্য বিশেষ দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন, যা ভারতীয় শিল্পখাতে এখনো পর্যাপ্তভাবে নেই।

৪. বিনিয়োগের অভাব: যদিও মেক ইন ইন্ডিয়ার মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে, তবুও ভারতীয় শিল্পের বিভিন্ন খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

ভারতীয় উৎপাদন খাতের ভবিষ্যৎ

ভারতের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য উৎপাদন খাতের বিকাশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের সাফল্য এবং এর ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

১. টেকসই উৎপাদন

উৎপাদন খাতের জন্য টেকসই উৎপাদন কৌশল গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার, পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা আবশ্যক। পরিবেশগতভাবে টেকসই উৎপাদন শুধু দেশীয় উন্নয়নের জন্য নয়, বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতার জন্যও প্রয়োজন।

২. শ্রম দক্ষতা উন্নয়ন

ভারতের বিপুল জনগোষ্ঠীকে দক্ষ শ্রমশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে। উচ্চ শিক্ষিত এবং প্রশিক্ষিত শ্রমিকের অভাব পূরণ করতে শিল্প প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ বাড়ানো প্রয়োজন।

৩. প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনে বিনিয়োগ

উৎপাদন খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উদ্ভাবন বাড়ানোর জন্য বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ এবং গবেষণায় বিনিয়োগ করলে উৎপাদন খাত আরো গুণগতভাবে উন্নত হবে।

৪. অবকাঠামো উন্নয়ন

উৎপাদন খাতের উন্নয়নের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন অপরিহার্য। রাস্তা, রেলপথ, পোর্ট এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা প্রয়োজন। শক্তিশালী অবকাঠামো উন্নয়ন দেশীয় উৎপাদনশীলতাকে বহুগুণে বাড়াতে পারে।

৫. আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সংযোগ

ভারতের উৎপাদিত পণ্য ও পরিষেবাগুলিকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্য শক্তিশালী প্রচেষ্টা করতে হবে। বৈশ্বিক চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে পণ্যের মান এবং মূল্য প্রতিযোগিতামূলক করতে হবে।

উপসংহার:

মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পটি ভারতের উৎপাদন খাতের উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যদিও প্রকল্পের লক্ষ্যসমূহ পূর্ণ মাত্রায় অর্জিত হয়নি, তবে এটি দেশের উৎপাদন খাতকে বৈশ্বিক মানের সাথে সমন্বিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনীতির স্থায়ী উন্নয়নের জন্য একটি শক্তিশালী শিল্পনীতি এবং কার্যকরী কৌশল প্রয়োজন।

সাম্প্রতিক আরো খবর, চাকরি এবং অন্যান্য তথ্যের জন্য আমাদের WhatsApp চ্যানেল অনুসরণ করুন


Discover more from Infodata News

Subscribe to get the latest posts sent to your email.