Kojagori Lakshmi Puja Date Time

Kojagori Lakshmi Puja Date Time: কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা বাঙালি হিন্দুদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব, যা লক্ষ্মী দেবীর উদ্দেশ্যে পালন করা হয়। লক্ষ্মী দেবীকে ধন-সম্পদ, ঐশ্বর্য ও সৌভাগ্যের দেবী হিসাবে পূজিত করা হয়। বাংলায় বিশেষ করে কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে এই পূজা করা হয়, যাকে “কোজাগরী পূর্ণিমা” বা “শরৎ পূর্ণিমা” বলা হয়। কোজাগরী শব্দের অর্থ হল “কে জেগে আছো?”—এমন একটি বিশ্বাস রয়েছে যে লক্ষ্মী দেবী সেই রাতে পৃথিবী পরিভ্রমণ করেন এবং যাঁরা জেগে থাকেন, তাঁদের ধন-সম্পদের বর দেন। এই পূজার সাথে বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন গভীরভাবে যুক্ত।

Table of Contents

Kojagori Lakshmi Puja ইতিহাস:

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার ইতিহাস এবং এর উৎপত্তি হিন্দু পুরাণে গভীরভাবে প্রোথিত। লক্ষ্মী দেবীকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি এবং ভরণপোষণের সাথে যুক্ত বলে বিশ্বাস করা হয়। পুরাণ অনুযায়ী, সমুদ্র মন্থন থেকে লক্ষ্মী দেবীর আবির্ভাব ঘটে, যা দেবতা ও অসুরদের মধ্যে সমুদ্র মন্থনের সময় ঘটেছিল। সমুদ্র মন্থন হল একটি গুরুত্বপূর্ণ পৌরাণিক ঘটনা, যেখানে চন্দ্র-সূর্যের সহায়তায় দেবতা ও অসুররা মন্দাকিনী নদী থেকে অমৃত লাভের উদ্দেশ্যে মন্থন করেছিল। লক্ষ্মী দেবী তখন থেকে সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি এবং শান্তির প্রতীক হয়ে উঠেন।

কোজাগরী পূর্ণিমার রাতটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এই রাতে পূর্ণিমার চাঁদের আলো সর্বাধিক উজ্জ্বল হয়। এমন বিশ্বাস রয়েছে যে লক্ষ্মী দেবী এই উজ্জ্বল রাতেই জগৎ পরিভ্রমণ করেন এবং তাঁর ভক্তদের উপর আশীর্বাদ বর্ষণ করেন। বাংলায় এই পূজার ইতিহাস বেশ পুরনো এবং এর সাথে কৃষিজীবী সংস্কৃতি গভীরভাবে জড়িত। শরৎকালের সময় শস্য কাটার আগে এই পূজা করা হয়, যাতে দেবীর কৃপায় শস্য ফলন ভালো হয় এবং গ্রামবাসীরা ধনসম্পদ লাভ করতে পারেন।

Kojagori Lakshmi Puja উদযাপন:

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা সাধারণত বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে ধুমধামের সাথে পালিত হয়। এই পূজার মূল উদ্দেশ্য হল লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা করে ধন-সম্পদের কামনা করা এবং জীবনে সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্য লাভ করা। বাঙালিরা লক্ষ্মী দেবীকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে পূজা করে এবং বিশ্বাস করে যে তিনি যদি সন্তুষ্ট হন, তবে ঘরে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও শান্তি বিরাজ করবে।

পূজার দিন সকালে ঘরবাড়ি পরিষ্কার করা হয়, কারণ লক্ষ্মী দেবী পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার প্রতীক। পূজার সময় ভক্তরা লক্ষ্মী দেবীর প্রতিমা বা মূর্তির সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে ধূপ-ধুনা দেন। পূজার মূল উপকরণ হিসেবে আলপনা দেওয়া হয়, বিশেষ করে ধান ও চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি করা আলপনা খুবই জনপ্রিয়। এতে লক্ষ্মী দেবীর পা আঁকা হয়, যা ঘরে লক্ষ্মী দেবীর প্রবেশের প্রতীক।

রাতে লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা করার সময় চন্দ্রদর্শন করা হয়, কারণ পূর্ণিমার রাতে চাঁদকে দেখে পূজা করলে লক্ষ্মী দেবী সন্তুষ্ট হন বলে মনে করা হয়। বাড়ির মহিলারা লক্ষ্মী দেবীর জন্য নানা ধরনের প্রসাদ তৈরি করেন, যার মধ্যে নারকেল নাড়ু, খিচুড়ি, মিষ্টি, ফলমূল প্রভৃতি অন্যতম।

Kojagori Lakshmi Puja কারণ এবং তাৎপর্য:

লক্ষ্মী পূজা হিন্দু ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, যা সাধারণত ধন, ঐশ্বর্য, সৌভাগ্য এবং সমৃদ্ধির দেবী লক্ষ্মীকে আরাধনার জন্য পালিত হয়। লক্ষ্মী দেবীকে বিশ্বাস করা হয় যে তিনি সংসারে শান্তি এবং সমৃদ্ধি নিয়ে আসেন। পূজার সময় ভক্তরা লক্ষ্মী দেবীর কৃপা লাভের আশায় তাঁকে আহ্বান করেন। এই পূজার মাধ্যমে আর্থিক সমৃদ্ধি, সুখ এবং সৌভাগ্য কামনা করা হয়। বাংলায় এবং ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে লক্ষ্মী পূজা বিশাল আকারে উদযাপন করা হয়, বিশেষ করে কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে।

লক্ষ্মী পূজা মূলত নতুন ফসল ঘরে তোলার সময় পালন করা হয়, যা কৃষিজীবী সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। লক্ষ্মী দেবীকে কৃষি ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সমৃদ্ধির প্রতীক হিসাবে দেখা হয়। এই পূজা মূলত বাঙালিরা তাদের ঘর ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সমৃদ্ধি এবং শান্তি কামনায় পালন করে থাকেন।

কোজাগরী পূজা কী?

কোজাগরী পূজা, যা কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা নামেও পরিচিত, হল লক্ষ্মী দেবীর একটি বিশেষ পূজা যা কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে করা হয়। ‘কোজাগরী’ শব্দটি এসেছে ‘কে জাগো’ বা ‘কে জেগে আছো’ থেকে। বিশ্বাস করা হয় যে এই রাতে লক্ষ্মী দেবী স্বর্গ থেকে নেমে পৃথিবী পরিভ্রমণ করেন এবং যাঁরা জেগে থাকেন, তাঁদের ঘরে প্রবেশ করেন এবং ধন-সম্পদের আশীর্বাদ দেন। এই পূর্ণিমা রাতটি শরৎ ঋতুর প্রথম পূর্ণিমা, যখন পূর্ণিমার আলোতে পৃথিবী আলোকিত হয়।

কোজাগরী পূজায় মূলত বাড়ির মহিলারা অংশ নেন এবং বাড়ির দরজা-জানালা খোলা রেখে দেবী লক্ষ্মীকে আহ্বান করেন, যাতে তিনি প্রবেশ করতে পারেন। লক্ষ্মী দেবীকে ধানের শিষ, চাল, ফুল, মিষ্টি এবং নারকেল দিয়ে পূজা করা হয়। এসময় ঘরবাড়ি সাফ-সুতরো করে পরিষ্কার রাখা হয়, কারণ লক্ষ্মী দেবী পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন।

লক্ষ্মী পূজাকে কোজাগরী কেন বলা হয়?

লক্ষ্মী পূজাকে কোজাগরী বলা হয় কারণ এটি কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে পালন করা হয়। ‘কোজাগরী’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত থেকে, যার অর্থ হল ‘কে জেগে আছো?’ এই পূজার সাথে এমন একটি বিশ্বাস জড়িত যে লক্ষ্মী দেবী এই রাতে পৃথিবীতে আসেন এবং যাঁরা জেগে থাকেন, তাঁদের ধন-সম্পদের বর প্রদান করেন। অতএব, এই পূজার মূল তাৎপর্য হল রাত জেগে লক্ষ্মী দেবীকে আহ্বান করা, যাতে তিনি সন্তুষ্ট হয়ে ভক্তদের উপর তাঁর কৃপা বর্ষণ করেন।

বাঙালি সমাজে কোজাগরী পূজা একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে। এই পূজা শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি একধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে পরিবার এবং প্রতিবেশীরা একসাথে এসে এই পূজা পালন করেন। এই পূজার মাধ্যমে তারা দেবী লক্ষ্মীর কৃপা লাভের চেষ্টা করেন, যাতে তাঁদের সংসারে এবং জীবনে আর্থিক সমৃদ্ধি এবং সৌভাগ্য আসে।

Kojagori Lakshmi Puja Date Time 2024

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা তারিখ ও সময় :

২০২৪ সালের কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা দুদিন পড়েছে . পূর্ণিমা তিথি ১৬ই অক্টোবর সন্ধ্যা ৭ তা ২৩ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড থেকে পরবর্তী দিন ১৭ই অক্টোবর সন্ধ্যা ৫টা ১৭ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড পর্যন্ত থাকবে

লক্ষ্মী দেবীর স্বামী কে?

লক্ষ্মী দেবীর স্বামী হলেন ভগবান বিষ্ণু। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, লক্ষ্মী দেবী বিষ্ণু দেবের সহধর্মিণী এবং তিনি ভগবান বিষ্ণুর সকল অবতারের সাথে সংযুক্ত। লক্ষ্মী দেবী ভগবান বিষ্ণুর সঙ্গে একাধিক অবতারে উপস্থিত হন, যেমন রাম এবং সীতা, কৃষ্ণ এবং রুক্মিণী ইত্যাদি। লক্ষ্মী দেবী হলেন ভগবান বিষ্ণুর ধন-সম্পদ ও সৌভাগ্যের দেবী, যিনি সংসারে সমৃদ্ধি এবং শান্তি প্রদান করেন।

বিষ্ণু এবং লক্ষ্মীর সম্পর্ক হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত তাৎপর্যময়। লক্ষ্মী দেবী সর্বদা বিষ্ণুর পাশে অবস্থান করেন এবং তাঁর সহায়তায় জগৎ পরিচালনার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেন। দেবী লক্ষ্মীর কৃপায় সংসারের সকল অশান্তি দূর হয় এবং আর্থিক সমৃদ্ধি আসে।

লক্ষ্মী দেবীর বোন কে?

লক্ষ্মী দেবীর বোন হলেন দেবী আলক্ষ্মী। আলক্ষ্মী হলেন দরিদ্রতা এবং অশান্তির প্রতীক। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, যেখানে লক্ষ্মী দেবী ধন-সম্পদ, সমৃদ্ধি এবং সৌভাগ্যের দেবী, সেখানে আলক্ষ্মী হলেন অভাব, দারিদ্র্য এবং দুর্ভাগ্যের দেবী। লক্ষ্মী এবং আলক্ষ্মী দুইজনই সমুদ্র মন্থনের সময় আবির্ভূত হয়েছিলেন, কিন্তু আলক্ষ্মীকে সাধারণত মানুষেরা দূরে রাখার চেষ্টা করে, কারণ তাঁর উপস্থিতি দারিদ্র্য এবং অশান্তি নিয়ে আসে।

অতএব, কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার সময় বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়, যাতে আলক্ষ্মীকে ঘরে প্রবেশ করতে না দেওয়া হয়। এজন্য ঘর পরিষ্কার করে রাখা হয় এবং পূজার সময় ধূপ-ধুনো দিয়ে পরিবেশ পবিত্র রাখা হয়, যাতে দেবী লক্ষ্মী সন্তুষ্ট হয়ে ঘরে প্রবেশ করেন এবং আলক্ষ্মীকে দূরে সরিয়ে রাখেন।

লক্ষ্মী দেবীর ভাই কে?

লক্ষ্মী দেবীর ভাই হলেন চন্দ্রদেব। চন্দ্রদেব হলেন চাঁদের দেবতা এবং তিনি সৌন্দর্য, শান্তি এবং শীতলতার প্রতীক। লক্ষ্মী এবং চন্দ্রদেব দুজনেই সমুদ্র মন্থনের সময় আবির্ভূত হন। পুরাণ অনুযায়ী, চন্দ্রদেব লক্ষ্মীর অত্যন্ত প্রিয় ভাই এবং পূজার সময় চাঁদকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। কোজাগরী পূজার সময় পূর্ণিমার চাঁদকে দেখে লক্ষ্মী দেবীর কৃপা লাভের জন্য ভক্তরা প্রার্থনা করেন।

লক্ষ্মী দেবীর ১২টি নাম কী কী?

লক্ষ্মী দেবীর বহু নাম রয়েছে, যেগুলি তাঁর বিভিন্ন রূপ এবং গুণাবলীকে নির্দেশ করে। লক্ষ্মীর ১২টি প্রধান নাম হল:

  1. আদিলক্ষ্মী
  2. ধনলক্ষ্মী
  3. ধান্যলক্ষ্মী
  4. গজলক্ষ্মী
  5. সান্তানলক্ষ্মী
  6. বিজয়লক্ষ্মী
  7. বিদ্যালক্ষ্মী
  8. ভগ্যলক্ষ্মী
  9. কামলক্ষ্মী
  10. রজতলক্ষ্মী
  11. বীরলক্ষ্মী
  12. সৌভাগ্যলক্ষ্মী

এই নামগুলি লক্ষ্মী দেবীর বিভিন্ন রূপ এবং শক্তিকে প্রতিফলিত করে। ভক্তরা লক্ষ্মীর এই নামগুলির জপ করে তাঁর কৃপা লাভের চেষ্টা করেন এবং জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।

ভারতের কোন রাজ্য লক্ষ্মী পূজার জন্য বিখ্যাত?

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাট রাজ্যগুলি লক্ষ্মী পূজার জন্য বিশেষভাবে বিখ্যাত। পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ করে কোজাগরী পূজার রাতকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হয়। এছাড়া উড়িষ্যার জগন্নাথ মন্দিরেও লক্ষ্মী পূজা ধুমধামের সাথে পালন করা হয়। মহারাষ্ট্রে দীপাবলির সময় লক্ষ্মী পূজা পালিত হয়, যা অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং জমকালো হয়।

পশ্চিমবঙ্গে কোন স্থান লক্ষ্মী পূজার জন্য বিখ্যাত?

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, হাওড়া এবং নদীয়া জেলার নবদ্বীপ লক্ষ্মী পূজার জন্য বিশেষভাবে বিখ্যাত। কলকাতায় লক্ষ্মী পূজা বিশেষ আড়ম্বরে পালিত হয়। নদীয়ার নবদ্বীপে লক্ষ্মী পূজা অত্যন্ত ধর্মীয় উৎসাহের সাথে পালন করা হয় এবং সেখানে লক্ষ্মী দেবীর পূজা দেখতে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়।

খেলনা গ্রাম: লক্ষ্মীপুজোর জমজমাট আয়োজনের প্রাণকেন্দ্র

হাওড়া জেলার আমতা ২ নম্বর ব্লক ও জয়পুর থানার সীমানায় অবস্থিত ছোট্ট একটি গ্রাম, খেলনা। যদিও এই গ্রামে হাতেগোনা কয়েকটি দুর্গা ও কালীপুজো আয়োজন করা হয়, কিন্তু খেলনা গ্রাম আসলে একটি ভিন্ন কারণে বিখ্যাত। এই গ্রাম সারা বছর জুড়ে একটি বিশেষ পুজোর জন্য পরিচিত—লক্ষ্মীপুজো। কোজাগরী পূর্ণিমার রাত, যা লক্ষ্মী পুজোর জন্য বিখ্যাত, এই গ্রামের এক বিশেষ উৎসবের পরিণত হয়েছে।

কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো: গ্রামের প্রাণকেন্দ্র

খেলনা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রতিটি কোণায় কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো ধুমধামের সাথে পালন করা হয়। সরকারি হিসেবে, এই ছোট্ট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ২৫টি বারোয়ারি লক্ষ্মীপুজো অনুষ্ঠিত হয়। তবে খেলনা গ্রামের উপপ্রধানের মতে, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। তিনি জানান, এই গ্রামে একশোরও বেশি লক্ষ্মীপুজো আয়োজন করা হয়, যার মধ্যে প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি বারোয়ারি পূজা। গ্রামজুড়ে প্রতিটি বাড়ি এবং পাড়ায় দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়, যা এই গ্রামকে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রদান করে।

থিম পুজোর বিশেষ আকর্ষণ

খেলনা গ্রামের বারোয়ারি ক্লাবগুলোর উদ্যোগে লক্ষ্মীপুজোয় একটি বিশেষ আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। অনেকেই এখন শহরের দুর্গাপুজোর মতোই থিম পুজোর মাধ্যমে দেবী লক্ষ্মীকে পূজা করেন। কখনও জঙ্গল, কখনও সমুদ্র, কখনও বা পাহাড়ের থিমে সেজে ওঠে পূজামণ্ডপ। প্রতিটি মণ্ডপে নতুন নতুন সৃজনশীল থিমের মাধ্যমে দেবী লক্ষ্মীর মূর্তিকে সাজানো হয়, যা দেখতে প্রচুর মানুষ সমাগম করেন। এই থিম পুজোর মাধ্যমে খেলনা গ্রামের লক্ষ্মীপুজো এখন এক বিশাল উৎসবে পরিণত হয়েছে, যা শুধু স্থানীয় বাসিন্দারা নয়, দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ দেখতে আসেন।

জনসমাগম ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা

খেলনা গ্রামের লক্ষ্মীপুজোয় প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়ে থাকে।  এই পুজোর জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয় এবং জননিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। শুধু পুলিশ নয়, স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য থাকে বিশেষ মেডিক্যাল টিমও। বিপুল জনসমাগম সামলাতে প্রশাসনও সবসময় প্রস্তুত থাকে, যাতে উৎসবটি নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়।

লক্ষ্মীপুজো: গ্রামের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অঙ্গ

খেলনা গ্রামে লক্ষ্মীপুজো শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি গ্রামের সংস্কৃতির একটি অপরিহার্য অংশ। বছরের অন্যান্য সময় এই গ্রাম শান্ত থাকলেও কোজাগরী পূর্ণিমার সময়ে সারা গ্রাম একযোগে মেতে ওঠে লক্ষ্মীপুজোর আনন্দে। প্রতিটি পরিবার দেবী লক্ষ্মীকে আহ্বান করে এবং গ্রামবাসীরা একসাথে এই পূজায় অংশ নেন। পুজোর কয়েকদিন ধরে সারা গ্রামই যেন আনন্দে ভাসে।

খেলনা গ্রাম হাওড়া জেলার একটি শান্ত ও ছোট্ট গ্রাম হলেও, লক্ষ্মীপুজোর সময় এটি এক বিশাল উৎসবের কেন্দ্রে পরিণত হয়। প্রতিটি থিম পূজার মাধ্যমে দেবী লক্ষ্মীর প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং সারা গ্রাম আনন্দে মেতে ওঠে। এই পুজো শুধু ধর্মীয় আচার নয়, এটি গ্রামের ঐতিহ্য এবং মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

আধুনিক সমাজে কোজাগরী পূজার গুরুত্ব:

আজকের আধুনিক সমাজেও কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা সমান গুরুত্ব নিয়ে পালিত হয়। বাংলার ঘরে ঘরে এই পূজা একটি ঐতিহ্য হিসাবে মেনে চলা হয়। এমনকি যারা বিদেশে থাকেন, তাঁরাও এই দিনে লক্ষ্মী পূজার আয়োজন করে থাকেন। আধুনিক নগর জীবনে অর্থনৈতিক সাফল্যের প্রতীক হিসাবে লক্ষ্মী পূজাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। লক্ষ্মী দেবীর আশীর্বাদে জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি আসে—এই বিশ্বাসই পূজার মূল চালিকাশক্তি।

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার সামাজিক প্রভাব:

লক্ষ্মী পূজার সামাজিক প্রভাবও বিশাল। এটি শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি মানুষের মাঝে ঐক্য ও সংহতি আনে। পাড়ায় পাড়ায় একত্রিত হয়ে লক্ষ্মী পূজা উদযাপন করার মাধ্যমে সমাজের লোকেরা একে অপরের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। ছোট থেকে বড় সবাই এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে এবং লক্ষ্মী দেবীর আশীর্বাদ লাভের আশায় পুজো করে।

উপসংহার:

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা বাঙালির জীবনে এক বিশাল তাৎপর্য বহন করে। এটি শুধু ধন-সম্পদের পূজা নয়, এটি মানুষের জীবনে সমৃদ্ধি, সৌভাগ্য এবং শান্তির প্রতীক। লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা জীবনের সকল অন্ধকার দূর করে আলোকিত ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দেয়।

Durga Puja 2025 Date: দুর্গা পূজা ২০২৫ তারিখ, আগমন ও গমন কিভাবে

সাম্প্রতিক আরো খবর, চাকরি এবং অন্যান্য তথ্যের জন্য আমাদের WhatsApp চ্যানেল অনুসরণ করুন


Discover more from Infodata News

Subscribe to get the latest posts sent to your email.