Diwali 2024 Date

Diwali 2024 Date: দীপাবলি, বা আলোর উৎসব, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান এবং শুভ উৎসব। এটি ভারতবর্ষ এবং অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে থাকা ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। অন্ধকারে আলোর বিজয়, ধর্মের প্রতি অঙ্গীকার, এবং নৈতিক মূল্যবোধের আদর্শ মেনে দীপাবলি উদযাপন করা হয়। ২০২৪ সালে দীপাবলি পালিত হবে ১ নভেম্বর, কার্তিক মাসের অমাবস্যায়। এ উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের ঘর, পরিবার এবং সমাজকে আলোকিত করার প্রয়াস চালায়।


দীপাবলির ইতিহাস ও এর বিবর্তন

দীপাবলির ইতিহাস হাজার বছর ধরে বিভিন্ন স্তরে প্রচলিত হয়ে আসছে। মূলত ভারতবর্ষের গ্রন্থ ও পুরাণে এই উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়। দীপাবলির আদি উৎস এবং বিবর্তন সম্পর্কে জানলে এ উৎসবের গুরুত্ব আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করা যায়।

রামায়ণ এবং মহাভারত থেকে উৎসের খোঁজ

রামায়ণ অনুসারে, রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র, তার বনবাস শেষে যখন রাবণকে বধ করে অযোধ্যায় ফিরে আসেন, তখন অযোধ্যাবাসী তাদের প্রিয় রাজার ফিরে আসার আনন্দে পুরো রাজ্য আলোকিত করেন। মাটির প্রদীপ এবং ফুল দিয়ে তারা রাস্তা ও ঘর সাজিয়ে রাখেন। এভাবে দীপাবলির শুরু হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। অন্যদিকে, মহাভারতে পাণ্ডবদের নির্বাসনের পরের সময়ে এই উৎসবের উদযাপনের কথা উল্লেখ পাওয়া যায়।


ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

দীপাবলি শুধুমাত্র একটি পার্বণের উৎসব নয়, এটি এক আধ্যাত্মিক মূল্যবোধও বহন করে। বিভিন্ন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এ উৎসবের গুরুত্ব আলাদা, যেমন হিন্দু, শিখ, জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মে দীপাবলির বিভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে।

হিন্দুধর্মে

হিন্দুধর্মে এটি প্রধানত দেবী লক্ষ্মীর পূজা হিসেবে পালন করা হয়, যিনি সম্পদ এবং সমৃদ্ধির দেবী। ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এই দিনটিকে নতুন অর্থনৈতিক বছরের সূচনায় উদযাপন করে এবং ব্যবসায় সমৃদ্ধির আশায় লক্ষ্মীর পূজা করে।

জৈন ধর্মে

জৈন ধর্মাবলম্বীদের জন্য, দীপাবলি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এই দিনে ভগবান মহাবীর নির্বাণ লাভ করেছিলেন। জৈন ধর্মাবলম্বীরা প্রার্থনা এবং উপবাসের মাধ্যমে এই দিনটি পালন করে থাকেন।

শিখ ধর্মে

শিখ ধর্মাবলম্বীদের জন্য দীপাবলি গুরু হরগোবিন্দ জির কারাগার থেকে মুক্তির স্মরণে উদযাপিত হয়। তাঁকে সম্মান জানিয়ে শিখ ধর্মাবলম্বীরা অমৃতসর স্বর্ণমন্দিরে দীপাবলির আলোকসজ্জা করে থাকে।


Diwali 2024 Calendar : পাঁচ দিনের উৎসব

দীপাবলি পাঁচ দিনের একটি উৎসব (Diwali 2024 Date), যা প্রতিটি দিন আলাদা আলাদা আচার-অনুষ্ঠানে পূর্ণ। চলুন বিস্তারিতভাবে প্রতিটি দিনের উদযাপনের বিষয়ে আলোচনা করা যাক:

  1. ধনতেরস
    ধনতেরসের দিন দেবী লক্ষ্মী ও ধন্বন্তরী দেবতার পূজা করা হয়। এই দিনে ঘরে নতুন পাত্র, অলঙ্কার এবং বাসনপত্র কেনার চল রয়েছে। এটি শুভ লক্ষ্মণ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ধনসম্পদের সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করে।
  2. নরক চতুর্দশী
    দ্বিতীয় দিনে নরক চতুর্দশী পালন করা হয়। এই দিনে রাক্ষস নরকাসুরকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বধ করেছিলেন। এই দিনটিতে মানুষ নিজেদের বাড়িঘর পরিষ্কার করে এবং দেহ ও মন পবিত্র করার জন্য বিশেষ স্নান করে।
  3. লক্ষ্মী পূজা
    দীপাবলির মূল দিন হল লক্ষ্মী পূজা। সন্ধ্যাবেলায় ঘরবাড়ি এবং ব্যবসায়িক স্থানে দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয় এবং আলোকমালা, প্রদীপ, ও আতশবাজির মাধ্যমে উৎসব পালিত হয়।
  4. গোবর্ধন পূজা
    গোবর্ধন পূজা কৃষ্ণের প্রিয় উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই দিন কৃষ্ণের স্মরণে গোবর্ধন পর্বত তুলে রাখার ঘটনাটি উদযাপন করা হয়। গবাদি পশুকে পূজা করার প্রথা রয়েছে।
  5. ভাই দশমী বা ভাই দুজ
    ভাই দুজে ভাই-বোনের সম্পর্ককে সম্মান জানানো হয়। বোনেরা তাদের ভাইদের দীর্ঘ জীবন এবং সুরক্ষার জন্য প্রার্থনা করে, এবং ভাইয়েরাও তাদের প্রতি স্নেহ প্রদর্শন করে।

Diwali 2024 Date: দীপাবলি ২০২৪

উৎসব তারিখ ও সময়
অমাবস্যা তিথি শুরু ৩১ অক্টোবর ২০২৪, বিকেল ০৩:৫২
অমাবস্যা তিথি শেষ ১ নভেম্বর ২০২৪, সন্ধ্যা ০৬:১৬
প্রাদোষ কাল বিকেল ০৫:১২ থেকে রাত ০৭:৪৩
লক্ষ্মী পূজা মূহুর্ত বিকেল ০৫:১২ থেকে সন্ধ্যা ০৬:১৬
বৃষভ মূহুর্ত সন্ধ্যা ০৬:০০ থেকে রাত ০৭:৫৯

Diwali 2024 Date: দীপাবলি ২০২৪ তারিখ, পূজার মূহুর্ত

তারিখ পূজার মূহুর্ত তিথি উৎসব বর্ণনা
২৯ অক্টোবর সন্ধ্যা ০৭:২৭ থেকে রাত ০৯:১৬ ত্রয়োদশী তিথি ধনতেরাস ধনতেরাস হল স্বর্ণ, রূপা বা নতুন বাসন কিনতে শুভ দিন। এই দিন দেবী লক্ষ্মী ও ভগবান ধন্বন্তরীকে সম্পদ ও কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করা হয়।
২৯ অক্টোবর  সন্ধ্যা ০৬:৩৭ থেকে ০৭:৫৬ ত্রয়োদশী তিথি যম দীপম এই শুভ দিনে ভক্তরা সরিষার তেলের প্রদীপ প্রজ্বলন করে ভগবান যমকে সম্মান জানান। অকাল মৃত্যুর ভয় দূর করতে ভগবান যমের পূজা করা হয়।
৩০ অক্টোবর  সন্ধ্যা ০৬:০৬ থেকে রাত ০৭:৫০ চতুর্দশী তিথি ছোটো দিওয়ালি ছোটো দিওয়ালি নারক চতুর্দশী নামেও পরিচিত। এই দিনটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নারকাসুরের বিরুদ্ধে জয়ের স্মরণে পালিত হয়। সকালে স্নান, সুগন্ধি তেল ব্যবহার এবং পূজা করা হয়।
৩১ অক্টোবর  সন্ধ্যা ০৭:১৯ থেকে রাত ০৯:১১ অমাবস্যা তিথি লক্ষ্মী পূজা এই শুভ দিনে দেবী লক্ষ্মীকে পূজা করা হয় এবং লক্ষ্মী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। মানুষ অন্ধকার দূর করতে প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বালায়। পরিবারবর্গ একত্রে দেবী লক্ষ্মীর কাছে সমৃদ্ধি, সুখ ও প্রাচুর্যের জন্য প্রার্থনা করেন।
২ নভেম্বর  সকাল ০৭:৫২ থেকে ১০:০০, বিকেল ০৪:২৬ থেকে ০৬:২৪ প্রতিপদ তিথি গোবর্ধন পূজা এই দিনে গোবর্ধন পূজা পালিত হয়, যা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গোবর্ধন পর্বত উত্তোলনের ঘটনা স্মরণ করে, যা তিনি প্রবল বৃষ্টিপাত থেকে গ্রামবাসীদের রক্ষা করতে করেছিলেন।
৩ নভেম্বর  দুপুর ০২:১৭ থেকে ০৪:২৫ দ্বিতীয়া তিথি ভাই দোজ ভাই দোজ, দিওয়ালির শেষ দিন, ভাই-বোনের সম্পর্ককে সম্মান জানায়। বোনেরা তাদের ভাইদের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রার্থনা করেন এবং ভাইরা তাদের বোনদের উপহার দেন এবং তাদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন।

ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতিতে দীপাবলি

ভারতবর্ষে বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং ভাষাভাষী মানুষ রয়েছে, এবং তাই দীপাবলির উৎসব পালনের রীতি স্থানভেদে আলাদা। দক্ষিণ ভারত, উত্তর ভারত, পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব এবং মহারাষ্ট্রে দীপাবলির উদযাপন শৈলীতে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।

  • দক্ষিণ ভারত: দক্ষিণ ভারতে দীপাবলির দিন সকালে স্নান এবং বিশেষ খাবার তৈরি করা হয়।
  • পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা: পশ্চিমবঙ্গে কালীপূজা পালন করা হয় এবং মাটির প্রদীপের মাধ্যমে বাড়ি আলোকিত করা হয়। দেবী কালীর পূজায় অন্ধকারকে দূর করে আলোর বিজয় উদযাপন করা হয়।

আধুনিক যুগে দীপাবলি উদযাপন

আধুনিক সময়ে দীপাবলির উদযাপন ঐতিহ্যের সাথে সাথে বেশ কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখন অনেকেই পরিবেশ বান্ধব দীপাবলি উদযাপনে উৎসাহী, যেখানে শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ কমানোর প্রচেষ্টা করা হয়।

পরিবেশবান্ধব দীপাবলি

আতশবাজির পরিবর্তে এখন অনেকেই মাটির প্রদীপ ও সোলার লাইট ব্যবহার করেন। এতে পরিবেশ রক্ষা হয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মও দীপাবলির আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।

সামাজিক সংহতি ও দীপাবলি

দীপাবলি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে একত্রিত করে। এই সময়ে মানুষ তাদের পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে সময় কাটায়, মিষ্টান্ন বিতরণ করে, এবং সামাজিক সংহতির বন্ধন দৃঢ় করে।


দীপাবলির অর্থনৈতিক প্রভাব

দীপাবলি ভারতের অন্যতম বৃহত্তম অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালনা করে। এই সময়ে বিভিন্ন সামগ্রী, বিশেষ করে সোনা, রূপা, ইলেকট্রনিক্স, এবং পোশাকের কেনাকাটার পরিমাণ বেড়ে যায়, যা অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং দোকানদাররা দীপাবলিতে বিক্রয় বাড়াতে বিশেষ ছাড় এবং অফার দিয়ে থাকে।

কর্মসংস্থানের সুযোগ

দীপাবলি উদযাপনকে কেন্দ্র করে প্রচুর পরিমাণে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। বাজারে শিল্পীদের হাতে তৈরি মাটির প্রদীপ, মোমবাতি, এবং আলংকারিক সামগ্রী কেনার প্রবণতা দেখা যায়।


উপসংহার

দীপাবলি উৎসবটির সৌন্দর্য এবং তাৎপর্য আমাদের জীবনে আলোর গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়। এটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সমাজের অন্ধকারকে দূর করে আলোর পথে চলার প্রেরণা জোগায়। ২০২৪ সালের দীপাবলিতে (Diwali 2024 Date) প্রতিটি ঘরে ও মনে নতুন আলোর প্রজ্জ্বলন ঘটুক – এই কামনাই রইল।

Kali Puja 2024:কালী পূজার ইতিহাস,তারিখ,অমাবস্যা তিথি,শুভ মুহূর্ত

সাম্প্রতিক আরো খবর, চাকরি এবং অন্যান্য তথ্যের জন্য আমাদের WhatsApp চ্যানেল অনুসরণ করুন


Discover more from Infodata News

Subscribe to get the latest posts sent to your email.