Ambubachi 2025 Date & Time: বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত ও গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে

Ambubachi 2025 Date & Time: অম্বুবাচী একটি পবিত্র এবং গভীরভাবে আধ্যাত্মিক হিন্দু উৎসব, যা প্রাচীনকাল থেকে কামাখ্যা দেবীর গর্ভে ধরিত্রী মাতার ঋতুমতী হওয়ার আধ্যাত্মিক প্রতিফলন হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বছরে একবার আষাঢ় মাসে কামাখ্যা মন্দির বন্ধ হয়ে যায় তিন দিনের জন্য, কারণ বিশ্বাস অনুযায়ী এই সময়ে মা কামাখ্যা ঋতুমতী হন।

এই পর্ব শুধু একটি পূজা বা মেলা নয়, বরং এটি নারীশক্তি, প্রজনন, এবং পৃথিবীর উর্বরতার প্রতীক। অম্বুবাচী এমন এক উপলক্ষ যা আধুনিক সমাজে নারী দেহের প্রাকৃতিক চক্র এবং তা নিয়ে থাকা ট্যাবুকে ভাঙার এক উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়।


 অম্বুবাচীর অর্থ ও উৎপত্তি

‘অম্বুবাচী’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘অম্বু’ (জল) এবং ‘বাচ’ (বৃদ্ধি) থেকে, যার অর্থ দাঁড়ায় “জলের উত্থান”। এটি বর্ষার শুরু এবং ভূ-মাতার ঋতুকালকে বোঝায়। বহু পুরাতন শাস্ত্রে উল্লেখ আছে, আষাঢ় মাসের নির্দিষ্ট তিথিতে ধরিত্রী ঋতুমতী হন এবং সেই সময় কৃষিকাজ, বিবাহ, গৃহপ্রবেশ ইত্যাদি নিষিদ্ধ থাকে।

মূলত কামাখ্যা মন্দিরকে ধরিত্রী বা ধরার রূপ মনে করা হয়। এই সময়ে তাঁর গর্ভদ্বার বা যোনিপীঠ বন্ধ রাখা হয় তিন দিন।


 Ambubachi 2025 Date & Time

পঞ্জিকা অনুযায়ী(Ambubachi 2025 Date & Time):

বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে–

  • অম্বুবাচী আরম্ভ: ২২ জুন ২০২৫, রবিবার, ৭ আষাঢ়, সময়– সকাল ৬টা ১০ মিনিট

  • অম্বুবাচী সমাপ্তি: ২৫ জুন ২০২৫, বুধবার,  ১০ আষাঢ় বিকেল  ৪/২৪/১৩ সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট গতে।

গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে–

  • অম্বুবাচী আরম্ভ: ২২ জুন ২০২৫, রবিবার, ৭ আষাঢ়, সময়– দুপুর ২টো ৫৬ মিনিট ৩ সেকেন্ড।

  • অম্বুবাচী সমাপ্তি: ২৫ জুন ২০২৫, বুধবার,  ১০ আষাঢ়সময়– রাত ৩টে ১৯ মিনিট ১৭ সেকেন্ড গতে।

এই সময়কালেই 9Ambubachi 2025 Date & Time) কামাখ্যা মন্দির সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকে। কোনও পূজার্চনা হয় না। মন্দিরের দরজায় লাল কাপড় দিয়ে বাঁধা দেওয়া হয়, প্রতীকীভাবে মাতৃগর্ভে ঋতু চলছে।


 তিথি ও জ্যোতিষীয় পটভূমি

(Ambubachi 2025 Date & Time)অম্বুবাচীর সময় সূর্য থাকে মৃগশিরা নক্ষত্র থেকে আদ্রা নক্ষত্রে, যা বর্ষার সূচনা নির্দেশ করে। আদ্রা নক্ষত্র নারীর উর্বরতা এবং আবেগের প্রতীক। এই জ্যোতিষ অনুসারে ধরিত্রী তখন প্রজননক্ষম অবস্থায় পৌঁছে। এই রূপক অর্থে ধরিত্রী ‘ঋতুমতী’ হয়ে ওঠেন। এটি একাধারে বৈজ্ঞানিক, আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক চেতনার গভীর প্রতিফলন।


 কামাখ্যা মন্দিরে আয়োজন

কামাখ্যা মন্দির, অসমের গৌহাটিতে অবস্থিত, শাক্ত উপাসনার প্রধান পীঠস্থান। এখানে মাতৃ-শক্তির যোনির পূজা হয়। অম্বুবাচী কালে মন্দিরে দরজা বন্ধ রেখে “বিশ্রাম” দেওয়া হয় দেবীকে। এর ফলে উপাসকরা অর্ঘ্য দেওয়া বন্ধ করেন।

এই সময়ে কামাখ্যা মন্দিরে তান্ত্রিক সাধকদের ভিড় জমে। মন্দির চত্বরে তৈরি হয় অস্থায়ী তাবু, যেখানে সাধুরা থাকেন এবং তপস্যা করেন। তিন দিনের শেষে ‘স্নান’ ও ‘দার্শনিক প্রাসাদ বিতরণ’ করা হয়, যাকে বলে ‘দীঘি’র লালপানি – দেবীর ঋতুকালীন রক্ত প্রতীক।


 সামাজিক ও কৃষিশ্রেণির প্রভাব

আদিকালে, যখন ঋতুর প্রভাব ও কৃষির গুরুত্ব ছিল প্রখর, তখন এই উৎসব ছিল এক ধরনের কৃষিভিত্তিক তত্ত্ব। অম্বুবাচী চলাকালীন জমিতে চাষ হয় না। গৃহস্থালি কাজ যেমন রান্না, পরিষ্কার ইত্যাদিতে বিরতি দেওয়া হয়। এটি ছিল ভূমিকে বিশ্রামের সময় দেওয়া।

গ্রামীণ নারীরা এই তিন দিনে বিশেষ করে নিজেদের বিশ্রামে রাখেন, গান গায়, গল্প করে এবং শরীরের প্রতি যত্ন নেয়। এইভাবে প্রাকৃতিক জীবনের সঙ্গে নারীর সম্পর্ক গভীরতর হয়ে ওঠে।


আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা ও তান্ত্রিক আচার

অম্বুবাচী হল তান্ত্রিকদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এটি একমাত্র সময়, যখন বহিরাগতরা তান্ত্রিক সাধনাপ্রক্রিয়া দেখতে পান। কামরূপ-কামাখ্যা ভারতের অন্যতম বৃহত্তম তান্ত্রিক পীঠ।

এই সময় সাধুরা অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দেন, মন্ত্রোচ্চারণ করেন, এবং মহিষ বলি প্রথার মধ্য দিয়ে শক্তি আহ্বান করেন। কেউ কেউ ‘নগ্ন সন্ন্যাসী’ হয়ে উপবাসে থাকেন, কেউ আবার লাল বসনে রক্তবর্ণ পান করে মায়াশক্তির সঙ্গে একাত্ম হন।


 পার্থিব ও আধ্যাত্মিক নির্দেশনা

কী করবেন না:

  • বিবাহ

  • গৃহপ্রবেশ

  • যৌন মিলন

  • কৃষিকাজ

কী করবেন:

  • মা কামাখ্যার স্তবপাঠ

  • উপবাস

  • লাল ফুল, লাল চিরুনি, লাল সিঁদুর দান

  • মহিলা-স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রচার


মেলায় ভিড় ও ভক্তদের প্রত্যাশা

প্রতি বছর লাখ লাখ ভক্ত কামাখ্যায় উপস্থিত হন এই উপলক্ষে। মন্দির বন্ধ থাকলেও, তীর্থযাত্রীরা মন্দির চত্বরে অপেক্ষা করেন দেবীর ‘দর্শন’ ও ‘প্রসাদ’ পাওয়ার জন্য।

অনেক ভক্ত বিশ্বাস করেন, এই সময়ে কামাখ্যার আশীর্বাদে সন্তান লাভ, মানসিক প্রশান্তি ও পারিবারিক সমৃদ্ধি ঘটে।


 ইতিহাস ও সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট

প্রাচীন শাস্ত্রে কামাখ্যা মন্দিরের উৎপত্তি হয়েছে সেই সময়, যখন সতীর যোনি অংশ পড়েছিল এই স্থানে। সেই থেকেই বাৎসরিক উৎসব অম্বুবাচীর প্রচলন হয়। ব্রিটিশ আমলে পর্যন্ত এই উৎসব তান্ত্রিক ও লোকায়ত প্রথা হিসেবে টিকে ছিল।

বর্তমানে আধুনিক রূপে এটি বৃহৎ পর্যটন উৎসবে পরিণত হয়েছে, যেখানে আধ্যাত্মিকতা, তন্ত্র, সংস্কৃতি ও নারীবাদ এক সূত্রে গাঁথা।


 উপসংহার

Ambubachi 2025 Date & Time,অম্বুবাচী ২০২৫ শুধুই একটি তিথি নয়, এটি নারী শরীরের সঙ্গে সমাজের সম্মানের সম্পর্ক গড়ে তোলার এক অনন্য বার্তা বহন করে। এটি পৃথিবীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর সময়। অম্বুবাচীর মাধুর্য আমাদের শেখায়, জীবনের সমস্ত রূপ প্রকৃতির উপহার।

এই উৎসবে অংশ নেওয়া মানে শুধু ধর্ম নয়, নিজের মনের ভেতরের ‘মা’কে চিনে নেওয়া।

<

p data-start=”4721″ data-end=”4797″>সাম্প্রতিক খবরচাকরির খবর এবং অন্য খবর এর জন্য, নিয়মিত ফলো করুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল , ফেসবুক পেইজ 


Discover more from

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply