BrahMos Missile: ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের সুপারসনিক প্রতিরক্ষা শক্তির প্রতীক

ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এক অনন্য সংযোজন হল BrahMos Missile, ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল। এটি এমন একটি অস্ত্র যা বিশ্বের দ্রুততম ক্রুজ মিসাইলগুলির মধ্যে অন্যতম। ভারত-রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই মিসাইল বর্তমানে ভারতের স্থল, নৌ এবং বিমান বাহিনীতে সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর বহুমুখী ব্যবহার এবং অসাধারণ ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা এটিকে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলির কাছে একটি “গেম চেঞ্জার” অস্ত্রে পরিণত করেছে।

BrahMos Missile: ব্রহ্মোসের উৎপত্তি ও নামকরণ

 ব্রহ্মোস অ্যারোস্পেস

ব্রহ্মোস মিসাইলটি BrahMos Aerospace Pvt. Ltd. নামক একটি যৌথ সংস্থার মাধ্যমে তৈরি হয়েছে, যেখানে ভারতীয় DRDO (Defence Research and Development Organisation) এবং রাশিয়ার NPOM (NPO Mashinostroyenia) যৌথভাবে কাজ করছে। সংস্থাটি ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

 নামকরণ

“ব্রহ্মোস” নামটি এসেছে ভারতের ব্রহ্মপুত্র নদ এবং রাশিয়ার মস্কভা নদীর নামের সংমিশ্রণে। এটি প্রতীকীভাবে ভারত-রাশিয়ার কৌশলগত মৈত্রীর পরিচায়ক।

BrahMos Missile: ব্রহ্মোসের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ

 প্রযুক্তিগত গঠন

 দুই ধাপের ইঞ্জিন কাঠামো:

1. প্রথম ধাপ: কঠিন জ্বালানির বুস্টার, যা প্রাথমিক গতি ও উচ্চতা তৈরি করে।

2. দ্বিতীয় ধাপ: লিকুইড র‍্যামজেট ইঞ্জিন, যা মিসাইলটিকে সুপারসনিক গতিতে চালিয়ে নিয়ে যায়।

 নির্দেশনা পদ্ধতি:

• Inertial Navigation System (INS)

• GPS/GLONASS ভিত্তিক উপগ্রহ নিয়ন্ত্রণ

• Terminal Active Radar Homing (টার্গেটের শেষ পর্যায়ে স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ)

 ব্রহ্মোসের সংস্করণসমূহ

 মোতায়েন ও ব্যবহার

স্থল বাহিনীতে:

• পাহাড়ি অঞ্চল যেমন লাদাখ ও অরুণাচল প্রদেশে মোতায়েন

• Mobile Autonomous Launchers-এর মাধ্যমে কার্যকর প্রয়োগ

 নৌবাহিনীতে:

• INS Rajput, INS Kolkata শ্রেণির যুদ্ধজাহাজে সংযুক্ত

• উল্লম্ব উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা (Vertical Launch System) সহ

বিমানবাহিনীতে:

• Su-30MKI থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ব্রহ্মোস-A

• বর্তমানে ‘miniaturized’ সংস্করণ NG (New Generation) উন্নয়নাধীন

Indus Water Treaty 1960 :ইন্দাস জল চুক্তি ইতিহাস

 আন্তর্জাতিক রপ্তানি সম্ভাবনা

বর্তমান রপ্তানি:

• ফিলিপাইন: ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরিত

• ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, আমিরশাহি আগ্রহ দেখিয়েছে

রপ্তানির বাধা:

• MTCR (Missile Technology Control Regime) এর আগে 300 কিমির সীমা ছিল, কিন্তু ভারত ২০১৬ সালে MTCR-এ যোগদান করার পর সেই সীমা উঠে গেছে

 কৌশলগত গুরুত্ব

1. দ্রুততা: প্রতিপক্ষের প্রতিরক্ষা সিস্টেমকে ছাপিয়ে যেতে সক্ষম

2. সুনির্দিষ্টতা: পিন-পয়েন্ট স্ট্রাইকে সক্ষম, বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কম

3. সর্বত্র উৎক্ষেপণ: স্থল, জল, আকাশ—সব জায়গা থেকে উৎক্ষেপণ সম্ভব

4. দমনকারী (Deterrent) শক্তি: চিন ও পাকিস্তান সীমান্তে শান্তি বজায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

 ভবিষ্যৎ উন্নয়ন

• BrahMos-II (Hypersonic): Mach 7 গতি অর্জনের লক্ষ্যে উন্নয়ন চলছে

• AI-ভিত্তিক লক্ষ্য নির্দেশক প্রযুক্তি সংযোজন

• উন্নত সেন্সর ও সিগন্যাল ব্লকিং ক্ষমতা সহ নতুন সংস্করণ প্রস্তত

 উপসংহার

BrahMos Missile. ব্রহ্মোস শুধু একটি ক্ষেপণাস্ত্র নয় — এটি ভারতের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, প্রতিরক্ষা কৌশল এবং আন্তর্জাতিক অবস্থানের এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। “মেড ইন ইন্ডিয়া” ট্যাগ সহ এই অস্ত্র ভবিষ্যতে শুধু ভারতের সামরিক শক্তিকে নয়, রপ্তানি শিল্পকেও উন্নততর করবে। ব্রহ্মোসের প্রতিটি উৎক্ষেপণ বিশ্ববাসীকে স্মরণ করিয়ে দেয় – ভারত আর শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা গ্রহণকারী নয়, এক পরাক্রান্ত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির স্রষ্টাও বটে।

ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর (FAQ)

 1. ব্রহ্মোস কী?

উত্তর: ব্রহ্মোস একটি সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, যা ভারত ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে।

 2. ব্রহ্মোস নামের উৎস কী?

উত্তর: ব্রহ্মোস নামটি ভারতের ব্রহ্মপুত্র ও রাশিয়ার মস্কভা নদীর নাম থেকে এসেছে।

 3. ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের গতি কত?

উত্তর: ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের গতি প্রায় Mach 2.8 থেকে 3.0, অর্থাৎ শব্দের চেয়ে প্রায় তিনগুণ দ্রুত।

 4. এটি কোন কোন বাহিনীতে ব্যবহৃত হয়?

উত্তর: ব্রহ্মোস ভারতীয় সেনা, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীতে ব্যবহৃত হয়।

 5. ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ পাল্লা কত?

উত্তর: বর্তমানে এর পাল্লা প্রায় 450 থেকে 800 কিলোমিটার পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে।

 6. ব্রহ্মোস কত প্রকারে বিভক্ত?

উত্তর: মূলত তিনটি প্রধান সংস্করণ রয়েছে – স্থলভিত্তিক, নৌভিত্তিক এবং আকাশভিত্তিক। এছাড়াও BrahMos-NG ও BrahMos-II উন্নয়নাধীন।

 7. ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রে কোন ধরনের ওয়ারহেড ব্যবহার হয়?

উত্তর: এতে সাধারণত 200–300 কেজি ওজনের High Explosive (HE) ওয়ারহেড থাকে, পরমাণু ওয়ারহেড বহনের সক্ষমতাও রয়েছে।

 8. এই ক্ষেপণাস্ত্র কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়?

উত্তর: এটি ট্রাক, যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান এবং সাবমেরিন থেকেও উৎক্ষেপণযোগ্য।

 9. কোন ভারতীয় যুদ্ধবিমান থেকে ব্রহ্মোস উৎক্ষেপণ করা যায়?

উত্তর: বর্তমানে Su-30MKI যুদ্ধবিমান থেকে BrahMos-A সংস্করণ উৎক্ষেপণ করা যায়।

 10. ব্রহ্মোস কোন কোম্পানি তৈরি করে?

উত্তর: BrahMos Aerospace নামে একটি ভারত-রাশিয়া যৌথ উদ্যোগের সংস্থা এটি তৈরি করে।

 11. ব্রহ্মোস কোন সালে প্রথম পরীক্ষা করা হয়?

উত্তর: ব্রহ্মোসের প্রথম পরীক্ষা হয় ২০০১ সালের জুন মাসে।

 12. ব্রহ্মোস MTCR নিয়ম মেনে চলে কি?

উত্তর: হ্যাঁ, ভারত ২০১৬ সালে MTCR (Missile Technology Control Regime) সদস্য হওয়ায় এখন ব্রহ্মোসের উন্নত সংস্করণ রপ্তানি করা যায়।

 13. ব্রহ্মোস কোন কোন দেশে রপ্তানি হয়েছে বা হবে?

উত্তর: বর্তমানে ফিলিপাইন রপ্তানি চুক্তি করেছে, এবং ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশ আগ্রহ দেখিয়েছে।

 14. BrahMos-II কী?

উত্তর: BrahMos-II একটি উন্নয়নাধীন হাইপারসনিক সংস্করণ, যার গতি Mach 7 পর্যন্ত হবে।

 15. ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের নিরাপত্তার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর: এটি ভারতের প্রতিরক্ষা শক্তিকে বহুগুণে বাড়িয়েছে এবং শত্রু পক্ষের জন্য একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করে।

 16. ব্রহ্মোস কী পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম?

উত্তর: হ্যাঁ, এই ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম, যদিও সাধারণত HE ওয়ারহেডই ব্যবহৃত হয়।

 17. ব্রহ্মোসের লক্ষ্যবস্তুকে কীভাবে নির্ধারণ করা হয়?

উত্তর: এতে Inertial Navigation System, GPS/GLONASS এবং টার্মিনাল রাডার গাইডেন্স ব্যবহৃত হয়।

 18. ব্রহ্মোস কি দিনে এবং রাতে সমান কার্যকর?

উত্তর: হ্যাঁ, এটি ২৪ ঘন্টা যেকোনো আবহাওয়ায় ব্যবহারযোগ্য।

 19. ব্রহ্মোস কী একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে?

উত্তর: বর্তমানে এটি একক লক্ষ্যবস্তুতে খুব নির্ভুলভাবে আঘাত হানে, তবে ভবিষ্যতে মাল্টি-টার্গেট ক্ষমতা যোগ করা হতে পারে।

 20. ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের ভবিষ্যৎ কী?

উত্তর: BrahMos-II ও BrahMos-NG সংস্করণের মাধ্যমে এটি আরও দ্রুত, হালকা ও রপ্তানিযোগ্য হবে।

For more latest News, Jobs and Other Information, follow our WhatsApp Channel , Facebook Page regularly