Chinese Dam On Brahmaputra: চীন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা করছে। এই বাঁধ শুধুমাত্র পরিবেশগত বা ভূতাত্ত্বিক সমস্যা সৃষ্টি করবে না, বরং ভারতের জন্য, বিশেষ করে অরুণাচল প্রদেশের জন্য, এটি একটি বড় নিরাপত্তা ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খাণ্ডু এই প্রকল্পকে “জলের বোমা” বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, চীনের এই পদক্ষেপ ভারতের পক্ষে উদ্বেগজনক এবং এর ফলে অরুণাচল প্রদেশের অস্তিত্বই সংকটে পড়তে পারে।
Chinese Dam On Brahmaputra: ভারতের জন্য উদ্বেগ
ব্রহ্মপুত্র নদ, যাকে তিব্বতে ইয়ারলুং সাংপো বলা হয়, তার ওপর এই বিশাল বাঁধ তৈরির কাজ শুরু করেছে চীন। পেমা খাণ্ডু বলেছেন, এই বাঁধের কারণে অরুণাচলের সিয়াং অঞ্চল এবং আসামের নিম্নাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হতে পারে। যদি চীন তাদের স্বার্থে এই বাঁধ থেকে হঠাৎ পানি ছেড়ে দেয়, তাহলে স্থানীয় মানুষের জীবন, সম্পত্তি এবং জমি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেছেন, চীন কোনো আন্তর্জাতিক জলবণ্টন চুক্তির অংশ নয়, তাই তাদের ওপর ভরসা করা যায় না। এর ফলে চীন তাদের প্রাকৃতিক জলসম্পদকে যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারে, এবং ভারতের উপকারিতা বা প্রতিবন্ধকতার প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।
উদাহরণস্বরূপ, চীন যদি বাঁধে জল ছেড়ে দেয়, তাহলে অরুণাচল প্রদেশের সিয়াং জেলা ভেসে যেতে পারে। আবার, এই বাঁধের মাধ্যমে চীন পুরো ব্রহ্মপুত্রের জল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে, যা ভারতের কৃষি, পানীয় জল সরবরাহ এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য ভয়ানক বিপদ হতে পারে।
ভূতাত্ত্বিক বিপদ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা
এই বাঁধের নির্মাণ শুধুমাত্র জলসম্পদের নিয়ন্ত্রণের জন্য নয়, ভূতাত্ত্বিক বিপদও তৈরি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বাঁধের কারণে ভূমি সংকোচন, ভূমিকম্প, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা বাড়তে পারে।
যেমন, বাঁধের পানি আটকানোর ফলে জলাধারের তলদেশে জমে থাকা বিপুল পরিমাণ পানির চাপ ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে। অরুণাচল প্রদেশের সিয়াং, যেটি ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা সেচিত, এই ধরনের পরিবর্তনের ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই কারণেই পেমা খাণ্ডু এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ভারতের পালটা পদক্ষেপ
এই সমস্যা(Chinese Dam On Brahmaputra) মোকাবিলার জন্য অরুণাচল সরকার ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। তারা সিয়াং আপার মাল্টিপারপাস প্রজেক্ট নামে একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে, যা ভারতের জল নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং চীনের বাঁধের প্রভাব কমাতে সাহায্য করবে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত নিজেদের বাঁধ তৈরি করে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, যাতে চীনের হঠাৎ পানি ছাড়ার কারণে বন্যার ঝুঁকি কমানো যায়। খাণ্ডু মনে করেন, চীনের এই “ষড়যন্ত্র” রুখতে ভারতকেও ব্রহ্মপুত্র নদে বাঁধ নির্মাণের ভাবনা চিন্তা করা উচিত, যাতে ভারতীয় নিরাপত্তা আরও মজবুত হয়।
পেমা খাণ্ডু বলেছেন, চীন তাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে কোনো তথ্য শেয়ার করে না। তিনি মনে করেন, চীন হয়তো ইতিমধ্যেই তাদের বাঁধের কাজ শুরু করে দিয়েছে। এই বাঁধ তৈরি হয়ে গেলে সিয়াং এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানির প্রবাহ অনেক কমে যেতে পারে, যা স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার ওপর বড় প্রভাব ফেলবে।
স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা
এই বিষয়ে স্থানীয় আদি সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে। খাণ্ডু বলেছেন, তিনি শীঘ্রই একটি সভার আয়োজন করবেন, যাতে এই বিষয়ে আরও সচেতনতা তৈরি করা যায়। তিনি আরও বলেছেন, চীনের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে শুধু প্রতিবাদ করে বসে থাকলে হবে না। ভারতকে নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
🔔 সবসময় আপডেটেড থাকুন !!!
👉 আমাদের ফলো করুন:
📰 ট্রেন্ডিং খবর | 📢 জরুরি আপডেট | 💼 নতুন চাকরির সুযোগ
🟢 হোয়াটসঅ্যাপ | 🔵 টেলিগ্রাম
🔵 লিঙ্কডইন | 🔵 থ্রেড | 🔵 ফেসবুক | 🔵 ইনস্টাগ্রাম | 🔵 টাম্বলার
প্রকল্পের খরচ এবং প্রভাব
চীনের এই প্রকল্পের (Chinese Dam On Brahmaputra) খরচ প্রায় ১৩,৭০০ কোটি ডলার হতে পারে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে, যা ৬০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। কিন্তু এই প্রকল্পের পরিবেশগত এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি ভারত, আসাম এবং বাংলাদেশের জন্য বড় চিন্তার বিষয়।
ভারতের সামনে নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ
চীনের এই বাঁধ প্রকল্প(Chinese Dam On Brahmaputra) ভারতের জন্য একটি নতুন ধরনের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এখানে শুধুমাত্র সামরিক সংঘর্ষের সম্ভাবনা নেই, বরং জলসম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে একটি কৌশলগত যুদ্ধ শুরু হতে পারে। ব্রহ্মপুত্র নদ ভারতের পূর্বাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলাধার, এবং এই নদীর উপর চীনের নিয়ন্ত্রণ কার্যত ভারতের দক্ষিণপূর্ব অঞ্চলের জল-সম্পদ এবং সুরক্ষা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা চীনের এই প্রকল্পের ওপর নজর রাখছে এবং দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে, পেমা খাণ্ডুর মতে, ভারতের নিজস্ব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা এখন খুবই জরুরি। এই “জলের বোমা” থেকে রক্ষা পেতে ভারতকে এখনই তৎপর হতে হবে।
Discover more from
Subscribe to get the latest posts sent to your email.