Durga Puja 2026 Date: দুর্গা পূজা ২০২৬ তারিখ , নির্ঘণ্ট

Durga Puja 2026 Date: দুর্গা পূজা, বাঙালির জীবনের অন্যতম বৃহত্তম এবং আনন্দঘন উৎসব। এটি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, ঐতিহ্য, এবং সাংস্কৃতিক মননের মিশ্রণে রূপান্তরিত এক অসাধারণ উপাসনা।

দুর্গা পূজা ২০২৬ সালে উদযাপিত হবে ১৭ অক্টোবর থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত।

এই দিনগুলিতে কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাঙালি সমাজের মানুষ দেবী দুর্গার আগমনের উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা হয়। এই ব্লগটিতে আমরা আলোচনা করবো দুর্গা পূজার ইতিহাস, তার কারণ এবং এর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব।

Durga Puja 2026 Date:

  • October 10, 2026 (Saturday): Mahalaya
  • October 16, 2026 (Friday): Maha Panchami
  • October 17, 2026 (Saturday): Maha Shashthi
  • October 18, 2026 (Sunday): Maha Saptami
  • October 19, 2026 (Monday): Maha Ashtami
  • October 20, 2026 (Tuesday): Maha Navami
  • October 21, 2026 (Wednesday): Vijaya Dashami/Dussehra

দুর্গা পূজা ২০২৬ তারিখ

  • ২০২৬ সালে পিতৃপক্ষ অবসানে মহালয়া পড়বে ১০ অক্টোবর।
  • ষষ্ঠী ১৭ অক্টোবর ।
  • সপ্তমী ১৮ অক্টোবর ।
  • অষ্টমী ১৯ অক্টোবর।
  • নবমী ২০ অক্টোবর ।
  • দশমী ২১ অক্টোবর।
  • লক্ষ্মীপুজো পড়বে ২৫ অক্টোবর ।
  • কালীপুজো ৮ নভেম্বরে।

দুর্গা পূজার ইতিহাস: দেবী দুর্গার বিজয়গাথা

দুর্গা পূজার ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন এবং হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী দ্বারা প্রভাবিত। এটি বিশ্বাস করা হয় যে মহিষাসুর নামক এক অত্যাচারী অসুরকে বধ করার জন্য দেবী দুর্গার সৃষ্টি হয়েছিল। মহিষাসুর দীর্ঘ তপস্যার মাধ্যমে ব্রহ্মার কাছ থেকে বর প্রাপ্ত হন, যাতে কোনও দেবতা বা পুরুষ তাকে হত্যা করতে না পারে।

এই বর পেয়ে মহিষাসুর ভয়ানক অত্যাচার শুরু করেন এবং দেবতাদের স্বর্গ থেকে তাড়িয়ে দেন। দেবতারা তখন একত্রিত হয়ে শক্তিশালী এক নারীর আবির্ভাব ঘটান, যিনি ছিলেন দেবী দুর্গা। দেবী দুর্গা দশ হাতে বিভিন্ন দেবতার দেওয়া অস্ত্র নিয়ে মহিষাসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং অবশেষে তাকে বধ করেন।

দুর্গা পূজার গুরুত্ব: শক্তির প্রতীক দেবী দুর্গা

দুর্গা পূজার মূল তাৎপর্য হল শারদীয় দুর্গা উৎসব, যা অসুর বধের প্রতীক। এটি শক্তির আরাধনা এবং অশুভ শক্তির ওপর শুভ শক্তির বিজয়। বাঙালির জীবনে দুর্গা পূজা শুধু পূজার অনুষ্ঠান নয়, এটি সমাজের একত্রিকরণের প্রতীক।

দুর্গা পূজার দিনগুলি: ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিদিনের তাৎপর্য

দুর্গা পূজা পাঁচ দিনব্যাপী উৎসব, যা ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, এবং দশমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি দিনের আলাদা আলাদা তাৎপর্য রয়েছে, যা এই পূজাকে আরও বেশি বৈচিত্র্যময় এবং আনন্দময় করে তোলে।

১. ষষ্ঠী: দেবীর বোধন এবং আমন্ত্রণ

ষষ্ঠী হল পূজার প্রথম দিন, যেদিন দেবীর বোধন হয়। এই দিনে দেবী দুর্গাকে মণ্ডপে প্রতিষ্ঠিত করা হয় এবং তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এটি দেবীর আগমনের শুরু এবং সমস্ত বাঙালি সমাজে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।

২. সপ্তমী: নবপত্রিকা স্নান এবং দেবী আরাধনা

সপ্তমী তিথিতে নবপত্রিকার পূজা করা হয়, যা আরও পরিচিত ‘কলাবউ’ নামে। কলাবউকে গঙ্গার জলে স্নান করানো হয় এবং তারপর মণ্ডপে প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেবীর পূজার মূল অংশ সপ্তমী থেকেই শুরু হয়।

৩. অষ্টমী: মহাষ্টমীর মহাপূজা এবং সন্ধিপূজা

মহাষ্টমী হল দুর্গা পূজার সবচেয়ে পবিত্র দিনগুলির একটি। এই দিনে মহাগৌরী রূপে দেবীর পূজা করা হয়। এছাড়া সন্ধিপূজা এই দিনে অনুষ্ঠিত হয়, যা একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ সময়।

৪. নবমী: মহিষাসুর বধ এবং আরতির দিন

নবমী তিথিতে দেবীর মহিষাসুর বধের স্মরণে বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। নবমী হলো শক্তির উপাসনার চূড়ান্ত দিন, এবং এই দিনে সম্পূর্ণ সমাজে পূজার আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। আরতির মাধ্যমে দেবীর প্রতি ভক্তি নিবেদন করা হয়।

৫. দশমী: বিজয়া দশমী এবং প্রতিমা বিসর্জন

দশমী বা বিজয়া দশমী হলো পূজার শেষ দিন, যখন দেবী দুর্গার বিসর্জন দেওয়া হয়। এই দিনটি অত্যন্ত আবেগঘন এবং সারা সমাজে এক ভিন্ন অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে দেবীকে বিদায় জানানো হয়, এবং সকলেই পরস্পরের সিঁদুর খেলায় অংশগ্রহণ করেন।

দুর্গা পূজার মণ্ডপ এবং প্রতিমা শিল্প

কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে দুর্গা পূজার মণ্ডপগুলি এক অসাধারণ শিল্পকলার মাধ্যমে সাজানো হয়। প্রতিমার নির্মাণ, মণ্ডপের থিম, এবং আলোকসজ্জা প্রতিটি স্থানেই আলাদা আলাদা এবং প্রতিটি মণ্ডপেই এক বিশেষ আভা থাকে। এই থিম মণ্ডপগুলি দর্শকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইকো-ফ্রেন্ডলি প্রতিমা এবং মণ্ডপগুলি অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, যা পরিবেশ সচেতনতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

দুর্গা পূজা এবং সামাজিক সংহতি

দুর্গা পূজা শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি এক সামাজিক মিলনক্ষেত্র। এই পূজার সময় বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হন এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ স্থাপন করেন।

প্যান্ডেল হপিং বা বিভিন্ন মণ্ডপে যাওয়া এবং পূজার আনন্দ ভাগ করে নেওয়া দুর্গা পূজার অন্যতম অংশ। এই সময়টিতে মানুষ তাদের ভেদাভেদ ভুলে একত্রিত হয় এবং সমাজে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেয়।

দুর্গা পূজার সাংস্কৃতিক দিক

দুর্গা পূজার সময় শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নয়, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হয়। যেমন যাত্রা, নাটক, গান, নৃত্য, এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতা। বিশেষ করে কলকাতার বিভিন্ন ক্লাব এবং মণ্ডপে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষ তাদের প্রতিভা প্রদর্শন করেন। দুর্গা পূজার সময় সংগীতানুষ্ঠান এবং ধুনুচি নাচও পূজার অন্যতম আকর্ষণ।

আধুনিক যুগে দুর্গা পূজা

বর্তমানে দুর্গা পূজা কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই নয়, সারা বিশ্বে বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে উদযাপিত হচ্ছে। লন্ডন, নিউইয়র্ক, সিডনি, টরন্টো সহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বাঙালিরা যেখানেই থাকুক না কেন, তারা তাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি বজায় রাখতে কখনও পিছু হটেন না।

এছাড়াও, সোশ্যাল মিডিয়া এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে পূজার আনন্দ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। পূজার লাইভ স্ট্রিমিং এবং অনলাইন প্যান্ডেল হপিংয়ের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনও প্রান্ত থেকে দুর্গা পূজার উন্মাদনা উপভোগ করা সম্ভব হচ্ছে।

দুর্গা পূজার প্রাসঙ্গিকতা এবং সমাজের ওপর প্রভাব

দুর্গা পূজা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি নারীর ক্ষমতায়নের একটি প্রতীক। দেবী দুর্গা হলেন শক্তির প্রতীক এবং তাঁর দশ হাতে অস্ত্র তুলে নারীর শক্তি ও সাহসের উদাহরণ। এছাড়াও, দুর্গা পূজার সময় বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে দারিদ্র্যপীড়িত মানুষদের সহায়তা প্রদান করা হয়।

অনেক প্যান্ডেল আয়োজন কমিটি এই সময়ে দান এবং দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করে, যা সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দুর্গা পূজার অর্থনৈতিক প্রভাব

দুর্গা পূজা পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতেও একটি বিশাল প্রভাব ফেলে। পূজার সময় পর্যটন বৃদ্ধি পায় এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বাড়ে। মণ্ডপ নির্মাণ, প্রতিমা তৈরি, আলোকসজ্জা, পোশাক, খাবার ইত্যাদি বিভিন্ন খাতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ হয়। এছাড়া পূজার সময় প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়, যা এই রাজ্যের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

দুর্গা পূজার গুরুত্ব

দুর্গা পূজা বাঙালির জীবনে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে। এটি কেবলমাত্র ধর্মীয় পূজা নয়, এটি বাঙালির মিলনক্ষেত্র। সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মানসিক দিক থেকে এই পূজা মানুষকে একত্রিত করে। দেবী দুর্গার শক্তি, সাহস এবং নারীর ক্ষমতায়নকে এই পূজার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।

উপসংহার

Durga Puja 2026 Date, বাঙালির জীবনে নতুন আশার আলো জ্বালাবে। এই উৎসবের মাধ্যমে আমরা আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা জানাই এবং সমাজের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বার্তা প্রচার করি। দেবী দুর্গার কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের সকলের জীবন থেকে অশুভ শক্তি দূর করেন এবং সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রদান করেন।

For more latest News, Jobs and Other Information, follow our WhatsApp Channel , Facebook Page regularly


Discover more from

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply