International Day for the Elimination of Violence Against Women

International Day for the Elimination of Violence Against Women,নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূলের আন্তর্জাতিক দিবস প্রতি বছর ২৫ নভেম্বর তারিখে পালিত হয়। এই দিনটি নারীর প্রতি সহিংসতার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং এই সমস্যা মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে।

নারীর প্রতি সহিংসতা একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা, যা শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্যও বড় বাধা সৃষ্টি করে। এই নিবন্ধে দিবসটির ইতিহাস, কারণ, প্রভাব, এবং প্রতিকারমূলক পদক্ষেপগুলোর বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা হবে।


International Day for the Elimination of Violence Against Women দিবসটির ইতিহাস

নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূলের জন্য ১৯৮১ সালে লাতিন আমেরিকার নারী অধিকার কর্মীদের প্রচেষ্টায় এই দিনটি প্রথম পালন করা হয়। এটি ১৯৬০ সালে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে মিরাবাল বোনদের হত্যা দিবস হিসেবে চিহ্নিত।

১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ এই দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে International Day for the Elimination of Violence Against Women,নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূলের আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

দিবসটির মূল লক্ষ্য:

  1. নারীর প্রতি সহিংসতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা।
  2. সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা।
  3. সহিংসতার শিকার নারীদের জন্য সমর্থন ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

নারীর প্রতি সহিংসতার ধরন

নারীর প্রতি সহিংসতা বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পায়। নিচে কিছু সাধারণ ধরন উল্লেখ করা হলো:

সহিংসতার ধরন বর্ণনা
শারীরিক সহিংসতা নারীদের ওপর শারীরিক আঘাত করা, যেমন মারধর, নির্যাতন।
মানসিক সহিংসতা অবমাননা, অপমান, মানসিক চাপ সৃষ্টি করা।
যৌন সহিংসতা ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, অপ্রাপ্ত বয়সে বিবাহ।
অর্থনৈতিক সহিংসতা নারীর আর্থিক স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া, সম্পত্তির অধিকার অস্বীকার।
ডিজিটাল সহিংসতা সাইবার বুলিং, ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে হয়রানি।

নারীর প্রতি সহিংসতার প্রভাব

নারীর প্রতি সহিংসতার প্রভাব শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়, এটি একটি সমাজ ও রাষ্ট্রকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

ব্যক্তি ও সমাজের ওপর প্রভাব:

  1. মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতি: বিষণ্নতা, উদ্বেগ, এবং আত্মবিশ্বাস হ্রাস।
  2. শারীরিক ক্ষতি: শারীরিক আঘাত, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
  3. অর্থনৈতিক ক্ষতি: কর্মজীবনে পিছিয়ে পড়া এবং আয় হ্রাস।
  4. সামাজিক ক্ষতি: পরিবার ও সমাজে শান্তি নষ্ট।
  5. জাতীয় অগ্রগতিতে বাধা: শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ হ্রাস।

নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূলে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা

(International Day for the Elimination of Violence Against Women)নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূলের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক উদ্যোগ:

উদ্যোগ বর্ণনা
সিডও (CEDAW) ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘের দ্বারা গৃহীত ‘নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণ সনদ’।
ইস্তানবুল কনভেনশন ২০১১ সালে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চুক্তি।
UNiTE ক্যাম্পেইন ২০০৮ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে ‘নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের জন্য একত্রিত হোন’ আন্দোলন।
২০৩০ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDG) SDG-এর ৫ নং লক্ষ্য, যা লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে কাজ করে।

ভারতের প্রেক্ষাপট:

ভারত একটি বৃহৎ ও বৈচিত্র্যময় দেশ, যেখানে নারীর অবস্থান ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে পরিবর্তিত হয়েছে। তবে, (International Day for the Elimination of Violence Against Women)আধুনিক সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত।

সহিংসতার ধরন এবং হার

ভারতে নারীর প্রতি সহিংসতার ধরন ও হার নিম্নরূপ:

সহিংসতার ধরন পরিসংখ্যান (জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো ২০২২)
গার্হস্থ্য সহিংসতা প্রতি ৩ জন নারীর ১ জন গার্হস্থ্য সহিংসতার শিকার।
ধর্ষণ প্রতি ১৬ মিনিটে ১ জন নারী ধর্ষণের শিকার।
অপ্রাপ্তবয়স্ক বিবাহ ২০২২ সালে অপ্রাপ্তবয়স্ক বিবাহের হার ছিল প্রায় ২৩%।
যৌন হয়রানি কর্মক্ষেত্রে এবং গণপরিবহনে নারীর যৌন হয়রানি একটি বড় সমস্যা।
অর্থনৈতিক বৈষম্য কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ পুরুষদের তুলনায় প্রায় ২২% কম।

ভারতের আইনি ব্যবস্থা

নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূলের জন্য ভারত সরকার বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেছে।

আইন বর্ণনা
দণ্ডবিধি ৩৭৫ (ধর্ষণ আইন) ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার জন্য কঠোর শাস্তির বিধান।
গার্হস্থ্য সহিংসতা আইন, ২০০৫ গৃহস্থালী পরিবেশে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ।
পসকো আইন, ২০১২ শিশুদের প্রতি যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে বিশেষ আইন।
যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন, ২০১৩ কর্মক্ষেত্রে নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন, ২০০৬ অপ্রাপ্তবয়স্ক বিবাহ রোধ করার জন্য কার্যকর আইন।

ভারতের উদ্যোগ

ভারত সরকার এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূলে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

গুরুত্বপূর্ণ সরকারী কর্মসূচি

কর্মসূচি উদ্দেশ্য
বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও নারী শিশুদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি এবং লিঙ্গ ভারসাম্য রক্ষা।
উজ্জ্বলা যোজনা গ্রামীণ নারীদের রান্নার জন্য ফ্রি গ্যাস সংযোগ প্রদান।
মিশন শক্তি মহিলাদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা।
ওয়ান স্টপ সেন্টার (OSC) সহিংসতার শিকার নারীদের জন্য একক সেবা কেন্দ্র।
নির্ভয়া তহবিল নারীদের জন্য সুরক্ষা ও পুনর্বাসনে বিনিয়োগ।

ভারতের চ্যালেঞ্জ

  1. মানসিকতা ও সামাজিক গঠন:

    • পিতৃতান্ত্রিক মনোভাব নারীর প্রতি সহিংসতার প্রধান কারণ।
    • লিঙ্গ বৈষম্য এবং কুসংস্কার নারীর অবস্থান দুর্বল করে তোলে।
  2. অপরাধের রিপোর্ট না করা:

    • সামাজিক লজ্জা ও ভয় অনেক নারীকে সহিংসতা রিপোর্ট করতে বাধা দেয়।
  3. আইন প্রয়োগে দুর্বলতা:

    • অনেক ক্ষেত্রে বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ এবং অকার্যকর।
  4. শিক্ষার অভাব:

    • নারীর শিক্ষার অভাব তাদের আর্থিক ও সামাজিক স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত করে।

শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

প্রশ্ন উত্তর
নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূলের জন্য কোন আন্তর্জাতিক দিবস পালিত হয়? ২৫ নভেম্বর।
ভারতের গার্হস্থ্য সহিংসতা আইন কোন সালে প্রণীত হয়? ২০০৫ সালে।
কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের জন্য কোন আইন রয়েছে? যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন, ২০১৩।
‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ কর্মসূচির লক্ষ্য কী? নারী শিশুর সুরক্ষা ও শিক্ষা নিশ্চিত করা।

প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ

নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

প্রতিরোধমূলক করণীয়:

  1. সচেতনতা বৃদ্ধি: গণমাধ্যম ও শিক্ষার মাধ্যমে সহিংসতার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো।
  2. শিক্ষার প্রসার: নারীর শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা।
  3. আইন প্রয়োগ: কঠোর আইন প্রণয়ন এবং এর কার্যকর বাস্তবায়ন।
  4. সমর্থন সেবা: সহিংসতার শিকার নারীদের জন্য সুরক্ষা কেন্দ্র এবং পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠা।
  5. ডিজিটাল নিরাপত্তা: সাইবার সহিংসতা রোধে সচেতনতা এবং প্রযুক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা।

পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর তালিকাভুক্ত করা হলো:

প্রশ্ন:

  1. International Day for the Elimination of Violence Against Women,নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূলের আন্তর্জাতিক দিবস কবে পালিত হয়?
    উত্তর: ২৫ নভেম্বর।
  2. জাতিসংঘ কোন বছর International Day for the Elimination of Violence Against Women দিবসটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে?
    উত্তর: ১৯৯৯।
  3. নারীর প্রতি সহিংসতার কয়টি ধরন রয়েছে?
    উত্তর: শারীরিক, মানসিক, যৌন, অর্থনৈতিক, ডিজিটাল।

উপসংহার

International Day for the Elimination of Violence Against Women,নারীর প্রতি সহিংসতা একটি গভীর সামাজিক সমস্যা যা দূরীকরণের জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় স্তরে গৃহীত পদক্ষেপগুলো সফল করতে সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। নারীকে সম্মান, স্বাধীনতা, এবং সুরক্ষা প্রদান একটি সমাজের প্রকৃত উন্নয়নের চিহ্ন।

Read More: List of Important Days in November 2024

World Kindness Day 2024: বিশ্ব সৌজন্য দিবসের ইতিহাস তাৎপর্য

Children’s Day 2024: ভারতে শিশু দিবস কেন পালন করা হয়?

সাম্প্রতিক আরো খবর, চাকরি এবং অন্যান্য তথ্যের জন্য আমাদের WhatsApp চ্যানেল অনুসরণ করুন


Discover more from

Subscribe to get the latest posts sent to your email.