Mahavir Jayanti,মহাবীর জয়ন্তী হল জৈন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। এটি জৈন ধর্মের চব্বিশতম এবং সর্বশেষ তীর্থঙ্কর ভগবান মহাবীর-এর জন্মদিবস হিসেবে পালিত হয়। এই দিনে তাঁর জীবনের শিক্ষা, অহিংসা, সত্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণের বার্তা স্মরণ করে গোটা সমাজে শান্তি ও মানবিকতার চেতনা জাগ্রত করা হয়।
Mahavir Jayanti ,মহাবীর জয়ন্তী ২০২৫ কবে?
বছর | তারিখ | বার | তিথি |
২০২৫ | ১০ এপ্রিল | বৃহস্পতিবার | চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষ ত্রয়োদশী |
Mahavir Jayanti ,মহাবীর জয়ন্তীর নির্দিষ্ট তারিখটি হিন্দু চান্দ্র ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। ইংরেজি ক্যালেন্ডারে এটি প্রতি বছর মার্চ বা এপ্রিল মাসে পড়ে।
মহাবীর স্বামীর জন্ম ও শৈশব
ভগবান মহাবীর জন্মগ্রহণ করেন খ্রিস্টপূর্ব ৫৯৯ সালে বিহারের কুণ্ডলগ্রামে, বৈশালীর নিকটে। তাঁর পিতার নাম ছিল রাজা সিদ্ধার্থ এবং মাতার নাম ছিল ত্রিশলা দেবী। জন্মের সময়ই জ্যোতিষীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে এই শিশুটি একজন মহামানব হবে।
ছোটবেলা থেকেই তিনি অত্যন্ত শান্ত, ধ্যাননিষ্ঠ ও ধর্মপরায়ণ ছিলেন। ৩০ বছর বয়সে তিনি রাজ্য ও সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন।
World Homeopathy Day:বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস
মহাবীরের সাধনা ও আত্মজ্ঞান
তপস্যা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তিনি ১২ বছর কঠোর সাধনা করেন। এরপর তিনি কৈবল্য জ্ঞান (মোক্ষ) লাভ করেন এবং জৈন ধর্মের তত্ত্ব ও নীতিগুলি প্রচার করেন।
তিনি সমাজকে ৫টি মূল ব্রতের শিক্ষা দেন—
অহিংসা, সত্য, অচৌর্য, ব্রহ্মচর্য ও অপরিগ্রহ। এই শিক্ষা আজও মানবসভ্যতার অন্যতম মূল্যবান দিশা।
মহাবীর জয়ন্তীর তাৎপর্য
Mahavir Jayanti ,মহাবীর জয়ন্তী আমাদের শুধু ধর্মীয় নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধের দিশাও দেখায়। এই দিনটি পালনের মাধ্যমে—
- মহাবীরের জীবনদর্শনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
- শান্তি, সংযম ও অহিংসার পথে সমাজকে এগিয়ে নেওয়া হয়।
- ভক্তরা আত্মশুদ্ধি ও নৈতিকতার দিকে মনোনিবেশ করেন।
মহাবীর জয়ন্তীতে(Mahavir Jayanti )পালনীয় আচার ও অনুষ্ঠান
১. শোভাযাত্রা: ভগবান মহাবীরের মূর্তি নিয়ে সুসজ্জিত রথে শোভাযাত্রা হয়, যা শহরজুড়ে পরিক্রমা করে।
২. মন্দিরে প্রার্থনা ও ধ্যান: জৈন মন্দিরে ধর্মোপদেশ পাঠ ও ধ্যান হয়।
৩. দান ও সেবা: গরিবদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ, বস্ত্রদান ও রক্তদান শিবির হয়।
৪. উপবাস ও নিরামিষ ভোজন: অনেক ভক্ত উপবাস পালন করেন এবং শুধুমাত্র সত্ত্বিক খাবার গ্রহণ করেন।
৫. শান্তি বার্তা প্রচার: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলিতে মহাবীরের আদর্শ নিয়ে আলোচনা ও সেমিনার হয়।
মহাবীর জয়ন্তীর ৫ শিক্ষা: পঞ্চ মহাব্রত
ক্রম | ব্রত | অর্থ |
১ | অহিংসা | কোনো প্রাণীর প্রতি হিংসা না করা |
২ | সত্য | সর্বদা সত্য বলা |
৩ | অচৌর্য | অন্যের সম্পত্তি বা জিনিস চুরি না করা |
৪ | ব্রহ্মচর্য | সংযমিত জীবনযাপন |
৫ | অপরিগ্রহ | ভোগ-লালসা ত্যাগ করে আত্মসংযম পালন |
ভগবান মহাবীরের বিখ্যাত উক্তি
“অহিংসাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম।”
“নিজেকেই জয় করাই সর্বশ্রেষ্ঠ বিজয়।”
“সব প্রাণীই সমানভাবে জীবনের অধিকারী।”
“ভোগ নয়, সংযমই সুখের পথ।”
আজকের সমাজে মহাবীরের শিক্ষা
বর্তমান সমাজে সহিংসতা, দ্বন্দ্ব, ভোগ ও অহংকারের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। ঠিক এই সময়ে মহাবীর স্বামীর শিক্ষা আমাদের নতুনভাবে ভাবতে শেখায়। অহিংসা, সত্য ও সংযমের মন্ত্র যদি সমাজে জারি রাখা যায়, তবে আমরা আরও মানবিক, শান্তিপূর্ণ এবং সহনশীল সমাজ গড়ে তুলতে পারি।
উপসংহার
Mahavir Jayanti, মহাবীর জয়ন্তী শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একটি জীবনের দর্শন। ভগবান মহাবীর আমাদের শেখান—কীভাবে জীবনকে সরল, সত্য ও সংযমে গঠন করতে হয়। এই জয়ন্তীতে আসুন আমরা তাঁর শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করি এবং আমাদের চারপাশে ভালোবাসা ও করুণার বার্তা ছড়িয়ে দিই।
মহাবীর জয়ন্তী সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর (FAQ)
মহাবীর জয়ন্তী কী?
উত্তর: মহাবীর জয়ন্তী হল জৈন ধর্মের ২৪তম তীর্থঙ্কর ভগবান মহাবীরের জন্মদিবস। এটি জৈন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ উৎসবগুলোর একটি।
২০২৫ সালে মহাবীর জয়ন্তী কবে?
উত্তর: ২০২৫ সালে মহাবীর জয়ন্তী পালিত হবে ১০ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার।
মহাবীর স্বামী কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন?
উত্তর: মহাবীর স্বামী জন্মগ্রহণ করেন বর্তমান বিহারের কুণ্ডলগ্রামে (প্রাচীন বৈশালীর নিকটে)।
মহাবীর জয়ন্তী কেন পালন করা হয়?
উত্তর: ভগবান মহাবীরের অহিংসা, সত্য, সংযম ও আত্মজ্ঞানের শিক্ষাকে স্মরণ ও সম্মান জানানোর জন্য মহাবীর জয়ন্তী পালন করা হয়।
ভগবান মহাবীর কোন ধর্মের প্রবর্তক?
উত্তর: ভগবান মহাবীর ছিলেন জৈন ধর্মের সর্বশেষ তীর্থঙ্কর এবং জৈন ধর্মের মূল আদর্শ প্রতিষ্ঠাতা।
মহাবীর জয়ন্তীতে কী ধরনের আচার পালিত হয়?
উত্তর: মন্দিরে পুজো, প্রার্থনা, উপবাস, শোভাযাত্রা, দান-ধ্যান ও ভগবানের বাণী পাঠ—এইসব আচার মহাবীর জয়ন্তীতে পালন করা হয়।
মহাবীরের পাঁচটি মূল শিক্ষা কী কী?
উত্তর:
- অহিংসা (হিংসা না করা)
- সত্য (সত্যবাদিতা)
- অচৌর্য (চুরি না করা)
- ব্রহ্মচর্য (সংযম)
- অপরিগ্রহ (ভোগবিলাস পরিহার)
মহাবীর জয়ন্তী কি জাতীয় ছুটি?
উত্তর: হ্যাঁ, মহাবীর জয়ন্তী ভারতে একটি জাতীয় ছুটি হিসেবে পালিত হয়, বিশেষ করে জৈন সম্প্রদায় অধ্যুষিত রাজ্যগুলিতে।
মহাবীর স্বামীর জীবন থেকে আমরা কী শিক্ষা নিতে পারি?
উত্তর: ভগবান মহাবীর আমাদের শেখান অহিংস জীবনযাপন, আত্মসংযম, সত্যের পথে চলা এবং সকল প্রাণীর প্রতি সমবেদনা দেখানো।
মহাবীর জয়ন্তী কিভাবে শিশুরা পালন করে?
উত্তর: শিশুরা মহাবীরের গল্প শোনে, শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে, আঁকার মাধ্যমে তীর্থঙ্করের জীবন তুলে ধরে ও মন্দিরে প্রার্থনা করে।
মহাবীরের বিখ্যাত কোন উক্তিটি এখনো জনপ্রিয়?
উত্তর: “অহিংসাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম।” — এই উক্তিটি ভগবান মহাবীরের সবচেয়ে বিখ্যাত ও প্রাসঙ্গিক উক্তি।
<
p data-start=”1983″ data-end=”2081″>সাম্প্রতিক খবর, চাকরি এবং অন্যান্য তথ্যের জন্য আমাদের WhatsApp চ্যানেল অনুসরণ করুন
Discover more from
Subscribe to get the latest posts sent to your email.