National Icon Ratan Tata, রাতন টাটা, ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এমেরিটাস, ৮৬ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। সোমবারেই তিনি একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে চলা জল্পনাকে নস্যাৎ করেছিলেন এবং জানিয়েছিলেন যে, তিনি শুধুমাত্র বয়সজনিত কারণে নিয়মিত মেডিকেল পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।
টাটা সন্সের বর্তমান চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন বুধবার গভীর রাতে এক বিবৃতিতে রতন টাটার মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করেন। তিনি তাঁর বিবৃতিতে রতন টাটার অসামান্য নেতৃত্ব, নিষ্ঠা এবং উদ্ভাবনশীলতার প্রশংসা করেন।
“অত্যন্ত গভীর বেদনায় আমরা বিদায় জানাচ্ছি শ্রী রতন নাভাল টাটাকে। তিনি ছিলেন এক অনন্য নেতা, যাঁর অপরিসীম অবদান শুধু টাটা গ্রুপকেই নয়, বরং আমাদের জাতির ভিত্তিও গড়ে তুলেছে,” বলেন চন্দ্রশেখরন।
“টাটা গ্রুপের জন্য, রতন টাটা শুধুমাত্র একজন চেয়ারম্যান ছিলেন না। আমার জন্য তিনি একজন মেন্টর, পথপ্রদর্শক এবং বন্ধু ছিলেন। নিজের উদাহরণের মাধ্যমে তিনি অনুপ্রাণিত করতেন। টাটা গ্রুপ তাঁর নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী নিজের উপস্থিতি বিস্তার করেছে, সবসময় সঠিক নৈতিকতার প্রতিশ্রুতি মেনে চলে,” আরও যোগ করেন তিনি।
রতন টাটার সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণ করে এন চন্দ্রশেখরন বলেন, “শিক্ষা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে, তাঁর উদ্যোগগুলি এমন এক গভীর প্রভাব ফেলেছে যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপকারে আসবে।”
National Icon Ratan Tata, রতন টাটার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই বিভিন্ন শিল্প মহল এবং সমাজের নানা স্তর থেকে শোকবার্তা আসতে শুরু করে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর শোকবার্তায় রতন টাটাকে “একজন উদার হৃদয় এবং অসাধারণ মানবিক মানুষ” বলে উল্লেখ করেন।
“শ্রী রতন টাটা জি ছিলেন এক দূরদর্শী ব্যবসায়িক নেতা, একজন উদারমনা মানুষ এবং এক অনন্য মানবিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ভারতের অন্যতম প্রাচীন এবং সম্মানিত ব্যবসায়িক গোষ্ঠীকে স্থিতিশীল নেতৃত্ব দিয়েছেন। একইসাথে, তাঁর অবদান শুধুমাত্র বোর্ডরুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি তাঁর নম্রতা, সহানুভূতি এবং আমাদের সমাজকে উন্নত করার অবিচল প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে অনেকের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন,” প্রধানমন্ত্রী মোদী একাধিক টুইটের মাধ্যমে নিজের শোকবার্তা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর শোকবার্তায় আরও উল্লেখ ছিল, রতন টাটার নেতৃত্ব শুধু ব্যবসায়িক সাফল্যের মাপকাঠিতেই মূল্যায়িত করা যাবে না, তিনি ছিলেন মানবতাবাদী এবং তাঁর উদ্যোগগুলি ভারতের সমাজের উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।
National Icon Ratan Tata, রতন টাটা, ভারতের অন্যতম সম্মানিত ও প্রতিভাবান শিল্পপতি, টাটা গ্রুপের প্রাক্তন চেয়ারম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতি অর্জন করেছেন। টাটা গ্রুপকে তিনি এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন এবং তাঁর কর্মজীবনের সাফল্য, মানবিক উদ্যোগ, এবং সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে ভারতীয় এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছেন। এই জীবনীতে, আমরা রতন টাটার শৈশব, শিক্ষা, কর্মজীবন, এবং তাঁর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
National Icon Ratan Tata প্রাথমিক জীবন ও শৈশব
National Icon Ratan Tata রতন নাভাল টাটা জন্মগ্রহণ করেন ২৮ ডিসেম্বর ১৯৩৭ সালে, মুম্বাইয়ে এক প্রভাবশালী ও সম্মানিত পরিবারে। তাঁর পিতামাতা ছিলেন নাভাল হরমুসজি টাটা এবং সুনু টাটা। টাটা পরিবার ভারতের অন্যতম বৃহৎ এবং পুরোনো শিল্পগোষ্ঠী টাটা গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
রতন টাটা ছোটবেলায় তাঁর বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকে বেশিরভাগ সময় তাঁর ঠাকুরমা নবাজবাই টাটার কাছে বড় হয়েছেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই সংযমী, নীতিবান এবং স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন, যা পরবর্তীকালে তাঁর ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে প্রতিফলিত হয়েছে।
শিক্ষা ও ছাত্রজীবন
রতন টাটার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় মুম্বাইয়ের ক্যাম্পিয়ন স্কুলে। পরবর্তীকালে তিনি মুম্বাইয়ের ক্যাথিড্রাল অ্যান্ড জন কনন স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের রিভারডেল কান্ট্রি স্কুলে পড়াশোনা করেন। উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল এবং কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
১৯৬২ সালে রতন টাটা কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্কিটেকচার এবং স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি ১৯৭৫ সালে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে অ্যাডভান্সড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম সম্পন্ন করেন। এই সময়কালে তিনি আধুনিক ব্যবসায়ের কার্যপ্রণালী ও নীতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন, যা তাঁর পরবর্তী শিল্পপতি জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
টাটা গ্রুপে প্রবেশ
১৯৬২ সালে রতন টাটা ভারতের টাটা গ্রুপে যোগ দেন। টাটা গ্রুপ ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীন ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলির মধ্যে অন্যতম, এবং রতন টাটা নিজের দক্ষতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে এখানে এক নতুন উচ্চতা অর্জন করেন।
প্রথমে তাঁকে টাটা স্টিলের শোভা প্রকল্পে কাজ দেওয়া হয়, যেখানে তিনি নীলকর্মী হিসাবে কাজ শুরু করেন। তিনি উচ্চপদস্থ পরিবার থেকে আসলেও কখনও নিজের উচ্চমানের সুবিধা গ্রহণ করেননি; বরং সাধারণ কর্মচারীর মতো কাজ করে সংস্থার ভিতরে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছিলেন। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে কর্মীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে শিখিয়েছে এবং তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম করেছে।
National Icon Ratan Tata নেতৃত্বে অভিষেক
১৯৯১ সালে, টাটা গ্রুপের তৎকালীন চেয়ারম্যান জে. আর. ডি. টাটা অবসর নেন এবং রতন টাটাকে তাঁর উত্তরসূরী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। এটি ছিল তাঁর কর্মজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়, কারণ টাটা গ্রুপকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব রতন টাটার কাঁধে এসে পড়ে।
রতন টাটা এই সময়ে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন, কারণ টাটা গ্রুপ ছিল অনেকগুলি বিভিন্ন ব্যবসায় বিভক্ত, যাদের মধ্যে কোনও সঠিক সমন্বয় ছিল না। তিনি কোম্পানির বিভিন্ন অংশকে একত্রিত করেন এবং একটি সুসংহত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেন। তিনি টাটা গ্রুপকে আধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের দিকে নিয়ে যান এবং অনেক নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
টাটা গ্রুপের সাফল্য
রতন টাটার নেতৃত্বে, টাটা গ্রুপ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে নিজের অবস্থান তৈরি করে। টাটা মোটরস, টাটা স্টিল, টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (TCS) এবং টাটা কেমিক্যালসের মতো সংস্থাগুলি রতন টাটার নেতৃত্বে নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়। তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদানগুলির মধ্যে রয়েছে:
- টাটা ইন্দিকা: ১৯৯৮ সালে, টাটা মোটরস প্রথম সম্পূর্ণ দেশীয়ভাবে তৈরি গাড়ি, টাটা ইন্দিকা লঞ্চ করে। এটি ভারতের গাড়ি শিল্পে একটি বড় পদক্ষেপ ছিল, কারণ এটি ভারতীয় সংস্থার দ্বারা তৈরি প্রথম প্যাসেঞ্জার গাড়ি ছিল। যদিও প্রথম দিকে এটি খুব একটা সাফল্য লাভ করেনি, পরে ইন্দিকা টাটা মোটরসের জন্য একটি সফল প্রকল্পে পরিণত হয়।
- টাটা ন্যানো: রতন টাটার একটি বড় স্বপ্ন ছিল সাধারণ মানুষের জন্য সস্তায় একটি গাড়ি তৈরি করা। ২০০৮ সালে তিনি “টাটা ন্যানো” বাজারে আনেন, যা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা গাড়ি। তাঁর এই উদ্যোগের পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি গাড়ি তৈরি করা যা ভারতীয় মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষও কিনতে পারবে।
- টেটলি টি অধিগ্রহণ: ২০০০ সালে টাটা গ্রুপ টেটলি টি নামক আন্তর্জাতিক চা কোম্পানিটিকে অধিগ্রহণ করে, যা ছিল টাটা গ্রুপের জন্য এক বড় সাফল্য। এই অধিগ্রহণের মাধ্যমে টাটা গ্রুপ আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করে।
- কোরাস অধিগ্রহণ: ২০০৭ সালে, টাটা স্টিল ব্রিটেনের কোরাস গ্রুপকে অধিগ্রহণ করে, যা ছিল ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক অধিগ্রহণ। এই অধিগ্রহণের মাধ্যমে টাটা স্টিল বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম স্টিল প্রস্তুতকারক কোম্পানিতে পরিণত হয়।
- জাগুয়ার এবং ল্যান্ড রোভার: ২০০৮ সালে, টাটা মোটরস যুক্তরাজ্যের প্রখ্যাত গাড়ি নির্মাতা জাগুয়ার এবং ল্যান্ড রোভার অধিগ্রহণ করে। এই অধিগ্রহণের মাধ্যমে টাটা মোটরস আন্তর্জাতিক বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হয়ে ওঠে।
টাটা ট্রাস্টস এবং সমাজসেবা
রতন টাটা শুধুমাত্র একজন সফল শিল্পপতি নন, তিনি একজন মানবতাবাদীও। তিনি টাটা ট্রাস্টসের মাধ্যমে ভারতের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পল্লী উন্নয়ন এবং অন্যান্য সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে অবদান রেখেছেন। টাটা ট্রাস্টস ভারতের অন্যতম বড় দাতব্য প্রতিষ্ঠান, যা বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত।
রতন টাটা নিজেও বিভিন্ন দাতব্য কাজে অর্থ দান করেন এবং সমাজের প্রান্তিক মানুষদের সাহায্য করার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন। তাঁর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সহানুভূতি তাঁকে একজন সত্যিকার অর্থে মহান ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে।
National Icon Ratan Tata ব্যক্তিগত জীবন
রতন টাটার ব্যক্তিগত জীবন বরাবরই খুব সাধারণ এবং সংযমী ছিল। তিনি আজীবন অবিবাহিত থেকেছেন এবং ব্যক্তিগত জীবনকে সবসময় প্রচারের আড়ালে রেখেছেন। তাঁর জীবনের এই দিকটি তাঁকে অনেকের কাছেই একটি রহস্যময় চরিত্রে পরিণত করেছে, তবে তিনি সবসময়ই নিজের কাজ এবং সমাজের উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছেন।
রতন টাটা তাঁর সরল জীবনযাপনের জন্যও খুবই বিখ্যাত। তিনি কখনও ব্যক্তিগতভাবে বিলাসিতার পেছনে যাননি এবং সর্বদাই নিজের জীবনকে সাধারণ ও শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনা করেছেন। তাঁর জীবনযাত্রা এবং নৈতিকতা তাঁকে একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তুলেছে।
রতন টাটার পুরস্কার ও সম্মাননা
National Icon Ratan Tata, রতন টাটার অসামান্য সাফল্য এবং সমাজে অবদানের জন্য তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য পুরস্কারগুলির মধ্যে রয়েছে:
- পদ্মভূষণ (২০০০): ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পদ্মভূষণ পুরস্কার।
- পদ্মবিভূষণ (২০০৮): ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পদ্মবিভূষণ পুরস্কার।
- ইংল্যান্ডের নাইটহুড: রতন টাটাকে যুক্তরাজ্য থেকে নাইট কমান্ডার অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (KBE) উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে।
অবসর গ্রহণ ও উত্তরাধিকার
২০১২ সালে রতন টাটা টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান পদ থেকে অবসর নেন। তাঁর অবসরের পরে, সাইরাস মিস্ত্রি টাটা গ্রুপের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন, যদিও পরবর্তীকালে তাঁকে এই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং পুনরায় রতন টাটা স্বল্প সময়ের জন্য চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
Ratan Tata family tree: টাটা পরিবারের ইতিহাস
Ratan Tata 86: রতন টাটার ৮৬ তাম জন্মদিন
সাম্প্রতিক আরো খবর, চাকরি এবং অন্যান্য তথ্যের জন্য আমাদের WhatsApp চ্যানেল অনুসরণ করুন
Discover more from Infodata News
Subscribe to get the latest posts sent to your email.