১৪ বছর বয়সী (Vaibhav Suryavanshi) বৈভব সূর্যবংশী, বিহারের সমষ্টিপুর জেলার এক সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে, আজ ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নাম।
২০২৫ সালের আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে খেলে মাত্র ৩৫ বলে শতরান করে তিনি হয়ে উঠেছেন আইপিএলের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান এবং দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান।
এই অসাধারণ কৃতিত্বের পরেও, বৈভব নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে থেকেছেন নির্লিপ্ত, আত্মীয়দের শুভেচ্ছা উপেক্ষা করে এগিয়ে গেছেন নিজের লক্ষ্যের পথে।
Vaibhav Suryavanshi: ক্রিকেটের প্রতি অগাধ ভালোবাসা
বৈভবের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা শুরু হয় মাত্র ৫ বছর বয়সে। ছোটবেলায়ই তিনি বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে নিজের প্রতিভার প্রমাণ দেন।
২০২৪ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে Vaibhav Suryavanshi বিহারের হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক করেন, যা তাকে ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম কনিষ্ঠ প্রথম-শ্রেণির ক্রিকেটার করে তোলে।
এরপর, অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিরুদ্ধে ৫৮ বলে শতরান করে তিনি ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়েন।
এই ধারাবাহিক পারফরম্যান্স তাকে আইপিএল ২০২৫-এ রাজস্থান রয়্যালসের নজরে আনে, এবং মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি ১.১ কোটি টাকায় দলটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন।
Vaibhav Suryavanshi:আইপিএলে ইতিহাস গড়া ইনিংস
২০২৫ সালের ২৮ এপ্রিল, গুজরাট টাইটান্সের বিরুদ্ধে ম্যাচে বৈভব সূর্যবংশী মাত্র ৩৫ বলে শতরান করেন, যা আইপিএলের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি।
এই ইনিংসে তিনি ১১টি ছয় এবং ৭টি চার মারেন, যার ফলে ৯৪ রানই আসে বাউন্ডারি থেকে। এই পারফরম্যান্সে তিনি রাজস্থান রয়্যালসকে ৮ উইকেটে জয় এনে দেন।
এই অসাধারণ ইনিংসের পর, ভারতের ক্রিকেট কিংবদন্তি রাহুল দ্রাবিড়, যিনি তখন রাজস্থান রয়্যালসের কোচ ছিলেন, খুশিতে নিজের ব্যথিত পা ভুলে উঠে দাঁড়িয়ে বৈভবকে অভিনন্দন জানান।
বৈভব সূর্যবংশী: ভারতের পরবর্তী বড় তারকা!
আত্মীয়দের উপেক্ষা: নিজের পথে চলা
এই সাফল্যের পর, বৈভবের কাছে ৫০০-রও বেশি মিসড কল আসে আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের কাছ থেকে। তবে, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ফোন বন্ধ রাখেন এবং কারো সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
(Vaibhav Suryavanshi)বৈভব বলেন, “আমি খুব বেশি মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করি না। আমার পরিবার এবং কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছাড়া আর কারো সঙ্গে যোগাযোগ রাখি না।”
এই সিদ্ধান্তের জন্য কেউ কেউ তাকে অহংকারী বললেও, বৈভব নিজের লক্ষ্য এবং মনোযোগ বজায় রাখতে এই পথ বেছে নিয়েছেন।
স্বীকৃতি ও পুরস্কার
বৈভবের এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তাকে ১০ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “বৈভব সূর্যবংশী বিহারের গর্ব এবং ভারতের ভবিষ্যৎ ক্রিকেট তারকা।”
এছাড়াও, ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ইংল্যান্ড সফরের জন্য ঘোষিত ১৬ সদস্যের দলে বৈভবের (Vaibhav Suryavanshi) নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা তার প্রতিভার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রমাণ।
মানসিক দৃঢ়তা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ
বৈভবের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে তার মানসিক দৃঢ়তা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ। তিনি বলেন, “সাফল্যের পর অনেকেই আপনার পাশে আসে, কিন্তু আমি জানি আমার আসল সমর্থক কারা। আমি তাদের সঙ্গেই থাকি।”
এই মনোভাব তাকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাবে, এবং তিনি ভবিষ্যতে ভারতের জাতীয় দলের হয়ে খেলবেন, এমনটাই প্রত্যাশা।
উপসংহার: এক অনুপ্রেরণার নাম
বৈভব সূর্যবংশীর(Vaibhav Suryavanshi) গল্প শুধুমাত্র ক্রিকেটের নয়, এটি এক অনুপ্রেরণার গল্প। যেখানে একটি কিশোর নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকে, আত্মীয়দের উপেক্ষা করে, কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছে।
তার এই যাত্রা আমাদের শেখায়, সত্যিকারের সাফল্য আসে নিজের ওপর বিশ্বাস এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে।
বৈভব সূর্যবংশী আজ শুধু বিহারের নয়, সমগ্র ভারতের গর্ব। তার এই সাফল্য ভবিষ্যতের তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং দেখাবে, স্বপ্ন পূরণের জন্য বয়স কোনো বাধা নয়।
সাম্প্রতিক খবর, চাকরির খবর এবং অন্য খবর এর জন্য, নিয়মিত ফলো করুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল , ফেসবুক পেইজ
Discover more from
Subscribe to get the latest posts sent to your email.